উপসর্গ পাল্টাচ্ছে ডেঙ্গু, বাঁচার উপায় বললেন ডা. আয়শা

0
249
ঢাকার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট টিবি হাসপাতালের ইনচার্জ ও সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার। ছবি: সংগৃহীত

ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বেড়েই চলেছে। আতঙ্ক শহর ছাপিয়ে এখন গ্রাম পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রতিটা ঘরে এখন ডেঙ্গুর ভয়। ডেঙ্গু জ্বরের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ডেইলিহেলথসল্যুশনের সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট টিবি হাসপাতালের ইনচার্জ ও সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার।

ডা. আয়শা আক্তার বলেন, ডেঙ্গুর উপসর্গগুলো এখন আর আগের মতো নেই। যেমন আগে তীব্র জ্বর উঠে যেত ১০৪ ডিগ্রি পর্যন্ত এবং তা তিন দিন থাকতো। এখন দেখা যাচ্ছে একদিন জ্বর, হালকা মাথা ব্যথা অথবা ডায়রিয়া দিয়ে শুরু হচ্ছে। যাদের আগে একবার ডেঙ্গু হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে দ্বিতীয়বার ডেঙ্গু হলে দেখা যাচ্ছে একদিন জ্বর। তার পরদিনই পেশেন্ট খারাপের দিকে চলে যাচ্ছে। এজন্য সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।

 

স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হলে, যেমন মাথাব্যথা, ডায়রিয়া, পেটের সমস্যা, পেট ব্যথা। এসব লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডেঙ্গু পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া জরুরি। আর অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মতো জ্বরের জন্য শুধু প্যারাসিটামল খেতে হবে। একইসঙ্গে প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার যেমন ডাবের পানি, বার্লি, ওরস্যালাইন ও বিশুদ্ধ খাবার পানি খেতে হবে।

এছাড়া ডেঙ্গু বিষয়ে নানা প্রশ্নের উত্তর এবং পরামর্শ দিয়েছেন এই চিকিৎসক। তার সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ নিচে তুলে ধরা হলো।

ডেইলিহেলথসল্যুশন: সাধারণ জ্বর নাকি ডেঙ্গু, সেটা বোঝার উপায় কী?

ডা.আয়শা আক্তার: জ্বর হলে ডেঙ্গু টেস্ট করতে হবে। যদি NS1 পজেটিভ আসে তাহলে বুঝতে হবে তার ডেঙ্গু হয়েছে। এ টেস্টটি তিন দিনের মধ্যে করতে হয়। তিনদিন পর NS1 নেগেটিভ হয়। তখন ডেঙ্গু বোঝার জন্য CBC, IgG and IgM টেস্ট করতে হয়।

ডেইলিহেলথসল্যুশন: ডেঙ্গু ধরা পড়লে বাড়িতে চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ আছে কী?

ডা.আয়শা আক্তার: হ্যাঁ, সুযোগ আছে। ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে বাসায় সুস্থ হয়ে যায়। কিন্তু অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মতো বাসায় থাকতে হবে। ডেঙ্গু হলে প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে।

ডেইলিহেলথসল্যুশন: এডিস মশা সাধারণত কেমন পানিতে, কোথায় জন্মে?

ডা.আয়শা আক্তার: এডিস মশা সাধারণত পরিষ্কার পানিতে জন্মায়। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে ধরন পাল্টিয়ে ময়লা পানিতেও এডিস মশা ডিম পাড়ছে।

ডেইলিহেলথসল্যুশন: এডিস মশার কোনো শ্রেণি বা প্রকারভেদ আছে কিনা?

ডা.আয়শা আক্তার: হ্যাঁ, আছে। ডেঙ্গুর ধরন বা সেরোটাইপ চারটি। তা হলো- ডেন১, ২,৩ ও ৪।

ডেইলিহেলথসল্যুশন: ডেঙ্গু মশা সাধারণত কখন কামড়ায়?

ডা.আয়শা আক্তার: ডেঙ্গু মশা সাধারণত দিনে কামড়ায়। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে সকালে, রাতেও কামড়াচ্ছে এই মশা। তাই যখনই ঘুমাতে যাবেন, তখনই মশারি ব্যবহার করতে হবে।

ডেইলিহেলথসল্যুশন: ডেঙ্গু রোগের প্রাথমিক লক্ষণ কী?

ডা.আয়শা আক্তার: তীব্র জ্বর, চোখের পেছনে ব্যথা, মাংসপেশিতে ব্যথা, খাওয়া-দাওয়া অরুচি, বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া।

ডেইলিহেলথসল্যুশন: রক্তের প্লাটিলেট কমে কততে নামলে রোগী মৃত্যুঝুঁকিতে পড়ে?

ডা.আয়শা আক্তার: এখানে প্লাটিলেট কাউন্টের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো পেশেন্ট খেতে পারছে কিনা। তার ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট টা ঠিক আছে কিনা। প্রেসার পালস ঠিক আছে কিনা। সেগুলো দেখা প্রয়োজন। প্লাটিলেট কাউন্ট বিশ হাজারের নিচে নেমে এলে রোগী ঝুঁকিতে পড়তে পারে, যদি তার ব্লাড প্রেসার কমে যায়। পেটে পানি আসে। ফুসফুসে পানি আসে। কিডনি ফাংশন কাজ না করলে, ব্রেনে ঠিকমতো অক্সিজেন সাপ্লাই না গেলে সেক্ষেত্রে রক্ত দেয়ার দরকার হয়। অনেক সময় দেখা যায় প্লাটিলেট কাউন্ট ১.৫ লাখ। কিন্তু রোগী শকে চলে যেতে পারে, এটা নির্ভর করে যেকোনো কো-মরবিডিটি আছে কিনা হাইপারটেনশনে, ডায়াবেটিস কিডনির সমস্যা (যদি থাকে)। এছাড়া যদি পেটে পানি আসে। ফুসফুসে পানি আসে। তার যদি কিডনি ঠিকমতো কাজ না করে, তাহলে পেশেন্ট শকে চলে যেতে পারে। এজন্য খুব ইম্পর্টেন্ট ওভার হাইড্রেশন, ডিহাইড্রেশন হওয়া যাবে না।

ডেইলিহেলথসল্যুশন: কী খেলে রক্তের প্লাটিলেট বাড়ে?

ডা.আয়শা আক্তার: পেঁপের জুস, ব্রকলি, ডাবের পানি, বিশুদ্ধ পানি,আমলকি, লেবু, মাল্টা ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খেলে রক্তের প্লাটিলেট বাড়ে।

ডেইলিহেলথসল্যুশন: প্লাটিলেট কমে যায় কেন, এর লক্ষণ কী?

ডা.আয়শা আক্তার: ক্ল্যাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরে প্লাটিলেট সামান্য কমলেও সাধারণত এক লাখের বেশি থাকে। সাধারণ ডেঙ্গু জ্বর আর ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারের পার্থক্য আছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার হলে প্লাটিলেট এক লাখের নিচে থাকবে, সেই সঙ্গে রক্তের হিমাটক্রিট ২০ শতাংশ বেড়ে যায়। প্লাজমা লিকেজ সঙ্গে বুকে পানি, পেটে পানি আসে, পানিশূন্যতা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা, প্লাজমা লিকেজ বা প্লাজমা রক্তনালির বাইরে যাতে চলে না আসে সে চেষ্টা করা। রক্তক্ষরণের জন্য ডেঙ্গু রোগী মারা যায় না, বেশির ভাগের মৃত্যু ঘটে ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে।

ডেইলিহেলথসল্যুশন: ডেঙ্গুতে প্লাটিলেট কমে যাওয়া কতটা বিপজ্জনক?

ডা.আয়শা আক্তার: এক লাখের নিচে নেমে গেলে নিবিড় পরিচর্যায় রাখতে হবে। ১০ হাজার এর নিচে নামলে ঝুঁকি বেশি।

ডেইলিহেলথসল্যুশন: ডেঙ্গুর কোন কোন উপসর্গ দেখা দিলে রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে?

ডা.আয়শা আক্তার: যদি রোগীর খুব বেশি পেটে ব্যথা করে, নাক দিয়ে অথবা মুখ দিয়ে রক্ত পড়ে, বমি হলে দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।

ডেইলিহেলথসল্যুশন: এডিস মশা থেকে বাঁচার উপায় কী?

ডা.আয়শা আক্তার: প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। মশার কয়েল, স্প্রে, মশারি ব্যবহার করতে হবে। ফুল হাতা জামা পরতে হবে। যেসব জায়গায় পানি জমে থাকে যেমন ফুলের টব, বালতি, পাত্রে জমে থাকা পানি প্রতিদিন ফেলে দিতে হবে।

ডেইলিহেলথসল্যুশন: মশার কয়েলে এডিস মশা থেকে রক্ষা পাওয়া যায় কিনা?

ডা. আয়শা আক্তার: মশার কয়েল বা স্প্রে ওই রুমটাকে মশামুক্ত রাখে। কিন্তু মশার কয়েলে যেহেতু কীটনাশক বা রাসায়নিক দ্রব্য থাকে, তাই স্প্রে করার আধাঘণ্টা পর আবার রুম এ যাওয়া যাবে।

 

সাক্ষাতকার নিয়েছেন প্রভাষ চৌধুরী