বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, কথাসাহিত্যিক ও লেখক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, ‘ছোট্ট শিশুরা সামাজিক রেসপন্স থেকে ইদানীং পিছিয়ে পড়ছে। এর কারণ স্ক্রিন বা মোবাইলের দিকে শিশুর রেসপন্স। অনেক মা-বাবা শিশুর হাতে মোবাইল দিয়ে খাবার খাওয়ানোসহ নানান কাজ করেন। এটি করলে শিশুরা স্ক্রিনমুখী হয়ে যাবে। শিশুদের বর্তমান এবনর্মালিটির জন্য অনেকাংশে মোবাইল দায়ী। এতে করে শিশুর মেধা বিকাশে বাধাগ্রস্ত হয়। শিশুর মোবাইল ব্যবহারে অটিস্টিকের বৈশিষ্ট্যকে ত্বরান্বিত করে।
শনিবার (১৭ জুন) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরো ডিজঅর্ডার অ্যান্ড অটিজম (ইপনা) প্রতিষ্ঠার ৫ম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ইপনার থিম সং-এ শিশুদের ফুলের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, তারা ফুলের মতোই পবিত্র। আর এসব বিশেষ শিশুদের বিশেষ যত্ন নিলে তারাও সমাজে বড় অবদান রাখতে সক্ষম হবে।
দুইদিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে শনিবার (১৭ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিলন হলে এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, ‘শিশুরা হলো ফুলের মতো। ফুল বিভিন্ন সময়ে বিকশিত হয়, প্রস্ফূটিত হয়। শিশুরাও নানান সময়ে ফুলের মত বিকশিত হয়। শিশুর মেধার বিকাশের জন্য তাদের অনুপ্রেরণা দিতে হবে। তাদের যে কোনও কাজে অনুপ্রেরণা দিতে হবে। অটিজম শিশুদের পর্যবেক্ষণ করে দেখতে হবে, কোন বিষয়ে তাদের আগ্রহ আছে। তাদের সে বিষয়ের দিকে ধাবিত করতে পারলে মেধার বিকাশ নিশ্চিত হবে। অটিস্টিক শিশুরা একেক জন একেক বিষয়ে এক্সপার্ট হয়ে ওঠেন।
তিনি বলেন, ‘অটিজম সম্পর্কে এখনও দেশের মানুষের মধ্যে অনেক ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। গ্রামাঞ্চলে অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুদের ব্যবহারের কারণে পাগল বলা হয়। এমনকি ভুল চিকিৎসা করে অনেক শিশুকে অকালে মেরে ফেলা হয়। অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুরা বিশেষ কোনও ক্ষেত্রে খুব দক্ষ হয়ে থাকে। তাই এদেরকে প্রতিবন্ধী হিসেবে চিহ্নিত না করে বিশেষ শিশু বলা উচিত।’ প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত করা গেলে অনেক শিশুর পক্ষে স্বাভাবিক জীবনযাপন সম্ভব বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইপনা একটি ইতিহাস। ইপনার মতো সম্প্রতি আরও দুটি ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে। দেশের প্রথমবারের মতো সফল লিভার ট্রান্সপ্লান্ট ও ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্টও ইতিহাসের অংশ।
ইপনা বিএসএমএমইউ-কে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সুপরিচিত দানে সহায়ক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিক জায়গা থেকে অস্টিটিক শিশুদের নিয়ে কাজ করে চলেছেন। তার সুযোগ্যকন্যা সায়মা ওয়াজেদ অটিজম শিশুদের জন্য সারা বিশ্বে মানবিক পরিবেশ সৃষ্টি এবং এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুদের মেধার মূলায়নের জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের একজন সদস্য হিসেবে সায়মা ওয়াজেদ অটিজম শিশুদের সুরক্ষা, প্রশিক্ষণ ও মেধা বিকাশের কাজ করার কারণে সারাবিশ্বে তাকে স্বাগত জানায়।’
প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই ইপনা ইতিবাচক কাজ করছে বলে জানান উপাচার্য। তিনি বলেন, ‘এই কাজকে আরও বেগবান করার জন্য বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্য হিসেবে সায়মা ওয়াজেদ এর অনুমতি নিয়ে তাকে ফ্যাকাল্টি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অটিস্টিক শিশুদের চিকিৎসা সারা দেশে মেডিকেল কলেজের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে হবে। একটি কোর্স রাখতে হবে অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে।’
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমেদ, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল, ইন্টারন্যাশনাল চাইল্ড নিউরোলজি অ্যাসোসিয়েশন (ইকনা) এর প্রেসিডেন্ট শিশু স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. প্রতিভা সিঙ্ঘি, এবং অ্যাসোসিয়েশন অব চাইল্ড নিউরোলজির (এওসিএন) প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক শেফালি গুলাতি প্রমুখ।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইপনা’র প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও শিশু অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা. শাহীন আখতার। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ইপনার ট্রেইনিং কো-অর্ডিনেটর ডা. মাজহারুল মান্নান। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যানরা, ইপনাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উক্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।