মালয়েশিয়ায় ট্যুরিজম হাসপাতাল চালু

0
59
ট্যুরিজম হাসপাতালের উদ্বোধন
ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় চারটি ফ্ল্যাগশিপ হাসপাতাল ঘোষণা করার মাধ্যমে এ ধরনের প্রথম ফ্ল্যাগশিপ মেডিক্যাল ট্যুরিজম হাসপাতালের উদ্যোগ চালু হয়েছে। হাসপাতালগুলো হলো ন্যাশনাল হার্ট ইনস্টিটিউট (ইনস্টিটিউট জান্টুং নেগারা), আইল্যান্ড হাসপাতাল, মাহকোটা মেডিক্যাল সেন্টার এবং সুবাং জায়া মেডিক্যাল সেন্টার।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মাহকোটা মেডিক্যাল সেন্টারের প্রধান নির্বাহী স্ট্যানলি লাম; সুবাং জয়া মেডিক্যাল সেন্টারের প্রধান নির্বাহী ব্রায়ান লিন; মালয়েশিয়া হেলথকেয়ার ট্রাভেল কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ দাউদ মোহাম্মদ আরিফ; মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. জালিহা মুস্তফা; স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল (ব্যবস্থাপনা)দাতো জয়নাল আলহাকাব সেমান; জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী দাতুক ড. আইজাই আজান বিন আব্দুল রহিম এবং আইল্যান্ড হাসপাতালের চিফ অপারেটিং অফিসার ড. গোহ কোক ইয়ং।

২০২২ সালের তথ্য বিশ্লেষণ ও সরেজমিনে মূল্যায়ন করে যোগ্যতা যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত তালিকা চূড়ান্ত করে প্রার্থীদের নির্বাচন করা হয়েছিল। পাশাপাশি চূড়ান্তভাবে নির্বাচিতরা প্রোগ্রামের পরবর্তী ধাপ অ্যাক্সিলারেশন পিরিয়ডে অগ্রসর হয়, যা তিন বছরের মধ্যে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবায় শ্রেষ্ঠত্বের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডিংয়ের সেরা অনুশীলন ও সূচকে ক্রমাগত তাদের বৃদ্ধি ও উন্নয়নে অবদান রাখবে।

এই ফ্ল্যাগশিপ প্রোগ্রামটি মালয়েশিয়া হেলথকেয়ার ট্রাভেল কাউন্সিলের (এমএইচটিসি) নেতৃত্বে মালয়েশিয়ার শীর্ষস্থানীয় হাসপাতালগুলোকে রোগীদের কাছে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের মান ও প্রচেষ্টাকে বৃদ্ধি করেছে। যার লক্ষ্য হলো মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্যসেবার অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করা। স্বাস্থ্য পরিষেবাকে একটি নিরাপদ ও বিশ্বস্ত শীর্ষস্থানীয় পর্যায়ে পৌঁছানোই এই কর্মসূচির লক্ষ্য। এ ছাড়া চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবার অফারগুলোকে শ্রেষ্ঠত্বে উন্নীত করা, যা মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রোফাইলকে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যসেবার কেন্দ্র হিসেবে উন্নীত করবে।

মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. জালিহা মুস্তাফা বলেন, ‘আজ আমরা ফ্ল্যাগশিপ প্রোগ্রামের সঙ্গে যে অগ্রগতি প্রত্যক্ষ করেছি, তা মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্যসেবার ভবিষ্যৎ মশালবাহী হয়ে ওঠার চলনশক্তি এবং ফোকাসের প্রমাণ, শুধু স্থানীয়ভাবে নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও দেশের পরিষেবা রফতানিতে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখছে। আমি বিশ্বাস করি যে ফ্ল্যাগশিপ প্রোগ্রাম চিকিৎসাসেবায় উদ্ভাবন ও উৎকর্ষকে উন্নত করবে এবং আমাদের দেশের জন্য আরও প্রাণবন্ত স্বাস্থ্যসেবাব্যবস্থা অর্জনের কাছাকাছি নিয়ে আসবে এবং মালয়েশিয়া হেলথকেয়ারকে একটি বিশ্বখ্যাত এবং বিশ্বাসযোগ্য বিশ্ব স্বাস্থ্যসেবা ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।’

মালয়েশিয়া হেলথকেয়ার ট্রাভেল কাউন্সিলের (এমএইচটিসি) প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ দাউদ মো. আরিফ বলেন, সরকারের দ্বারা সম্পূর্ণরূপে অনুমোদিত ফ্ল্যাগশিপ মেডিক্যাল ট্যুরিজম হাসপাতাল প্রোগ্রামের উদ্দেশ্য হলো, বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতকে একটি ভবিষ্যৎ অগ্রগতির দৃষ্টান্তে পরিণত করা। চিকিৎসা ও স্বস্থ্যসেবার শ্রেষ্ঠত্বের সর্বোত্তম অনুশীলন এবং আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডিংয়ের ওপর ভিত্তি করে ইন্ড টু ইন্ড রোগীদের অভিজ্ঞতা দেওয়ার জন্য উন্নত বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবাগুলোকে উন্নত করবে, যা সরকারি-বেসরকারি খাতের প্রতিযোগীদের মধ্যে সমন্বিত প্রচেষ্টার ফলাফল।

মো. আরিফ বলেন, স্বাস্থ্যসেবা নেওয়া ভ্রমণকারীদের জন্য মালয়েশিয়া একটি জনপ্রিয় আন্তর্জাতিক গন্তব্য। গত কয়েক বছরে বহুবার যুক্তরাজ্যভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা ভ্রমণ কর্তৃপক্ষ, ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল ট্রাভেল জার্নাল (আইএমটিজে) দ্বারা পরিচালিত ‘ডেস্টিনেশন অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার জিতেছে। ভ্রমণ ও স্বাস্থ্যসেবার জন্য মালয়েশিয়ার খ্যাতি ১ দশমিক ০৬ মিলিয়ন। ইউরোপীয় পর্যটককে আকৃষ্ট করে ২০১৯ সালে স্বাস্থ্যসেবা ভ্রমণকারীর সংখ্যা ছিল ১ দশমিক ২২ মিলিয়ন। বিশ্বজুড়ে মহামারি নির্মূল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশা করেন তিনি।

তিনি বলেন, ২০২২ সালে রেকর্ড ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির ওপর ভিত্তি করে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন রিঙ্গিত হেলথকেয়ার ট্রাভেলার (ইএচটি) রাজস্ব আয় করে। আগের বছর ২০১৯ সালে ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন রিঙ্গিত, যা প্রাকমহামারি পারফরম্যান্সে ৭৬ শতাংশে পৌঁছেছে। এমএইচটিসি এই খাতে স্থিতিশীলতা তৈরির জন্য তার প্রচেষ্টা জোরদার করছে এবং মালয়েশিয়া হেলথকেয়ারের প্যাকেজগুলোকে আরও উন্নত করার জন্য সব সময় চেষ্টা করেছে, যা স্বাস্থ্যসেবা ভ্রমণকারীদের আরও সেরা স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে।

মালয়েশিয়ার হাসপাতালগুলোর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ত্বরান্বিত করতেও এই কর্মসূচি অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে জানিয়ে আরিফ বলেন, আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডিং অর্জনের জন্য চিকিৎসার উৎকর্ষ ও সেবা প্রদানে হাসপাতালের প্রতিশ্রুতি ও সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমরা আমাদের অবস্থান আরও শক্ত হবে। মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্যবাজার সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে ক্লিনিক্যাল গবেষণায়ও একটি বিশেষ স্থান দখল করার জন্য আমরা উন্মুখ।

ফ্ল্যাগশিপ মেডিকেল ট্যুরিজম হাসপাতাল প্রোগ্রাম হলো এমএইচটিসি এবং গ্লোবাল মেডিকেল অ্যাক্রিডিটেশন সংস্থা (আইকিউভিআইএ) এবং জয়েন্ট কমিশন ইন্টারন্যাশনালের (জেসিআই) মধ্যে একটি সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা। আইকিউভিআইএ হলো জীববিজ্ঞান ইন্ডাস্ট্রির জন্য উন্নত বিশ্লেষণ, প্রযুক্তি সমাধান এবং ক্লিনিক্যাল গবেষণা পরিষেবাগুলোর আন্তর্জাতিক সংস্থা। অন্যদিকে জেসিআই হলো একটি স্বীকৃতি সংস্থা, যা শিক্ষা, প্রকাশনা, উপদেষ্টা পরিষেবা, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও সার্টিফিকেশনের মাধ্যমে রোগীর সুরক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত করতে কাজ করে।

মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনামের আইকিউভিআইএর জেনারেল ম্যানেজার জোনাথন রবার্টস বলেন, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক রোগীরা এই হাসপাতালগুলি থেকে বিভিন্ন ধরনের উন্নত চিকিৎসা ও পরিষেবাগুলো পেতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে কার্ডিওলজি, অনকোলজি, ফার্টিলিটি, অর্থোপেডিকস, নিউরোলজি এবং নান্দনিকতার মতো ক্ষেত্রগুলোতে বিশেষ চিকিৎসা, যা নিঃসন্দেহে এই হাসপাতালগুলোর স্বীকৃতি পেতে সহায়ক হয়েছে।

জয়েন্ট কমিশন ইন্টারন্যাশনালের (জেসিআই) অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতি ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জিন কোর্টনি বলেন, ফ্ল্যাগশিপ মেডিক্যাল ট্যুরিজম হাসপাতালগুলো অন্য বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা ও কেন্দ্রগুলোর জন্য একটি মডেল হিসেবে কাজ করবে। ক্রমাগত এই উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে প্রক্রিয়া, প্রযুক্তিগত ও জ্ঞানবৃদ্ধির মাধ্যমে চিকিৎসা ও পরিষেবা উভয়ের উৎকর্ষকে বাড়ায়।

মালয়েশিয়া স্বাস্থ্যসেবা ও এর পরিষেবা সম্পর্কে আরও তথ্য জানতে https://malaysiahealthcare.org, www.facebook.com/MHTCMalaysia অথবা LinkedIn এ পাওয়া যাবে মালয়েশিয়া হেলথকেয়ার ট্রাভেল কাউন্সিল।