ছেলে শিশুদের একটি সাধারণ অসুখের নাম ক্রিপঅর্কিডিজম – যে অসুখের উপসর্গ হচ্ছে অণ্ডকোষ যথাস্থানে না থাকা, বা খুঁজে না পাওয়া যাওয়া। একটি ছেলে শিশু জন্মের পর তার অণ্ডথলিতে অণ্ডকোষ আছে কী নেই সেটা অনেকেই বুঝতে পারেন না।
শিশু মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় তার অণ্ডকোষ থাকে শিশুটির শরীরের নীচের অংশে কিডনির নিচে।
ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগে আগে সেটা প্রাকৃতিক নিয়মে অণ্ডথলিতে এসে আস্তে আস্তে প্রতিস্থাপিত হয়।
কিন্তু কোন কারণে যদি এটা অণ্ডথলিতে এসে প্রতিস্থাপিত না হয়ে শরীরের অন্য কোন অংশে রয়ে যায় তাহলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় তাকে ক্রিপঅর্কিডিজম বলা হয়। মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর ছেলে শিশুদের অণ্ডথলি তাই পূর্ণাঙ্গভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার দিকে বিশেষভাবে জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ এবং ঢাকা শিশু হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ শাফি আহমেদ বলেন, অণ্ডথলিতে অণ্ডকোষ না থাকাটা বিরল কোন ঘটনা না।
তিনি বলেন “এটা সাধারণত প্রিম্যাচিউর বেবি বা যেসব শিশু সময়ের আগেই ভূমিষ্ঠ হয় তাদের ক্ষেত্রে এই আশঙ্কা বেশি থাকে। মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় সাত মাস থেকে আট মাসের মধ্যে অণ্ডথলিতে আসার কথা। কিন্তু আগেই ভূমিষ্ঠ হলে এই জটিলতা হতে পারে”।
ঢাকার শাহজাহানপুরের এক বাসিন্দা জানাচ্ছেন, ২০২০ সালের তার পুত্র সন্তান জন্ম নেয়।
এই নারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন “ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর ডাক্তার আমাদের জানান বিষয়টা। আমরাতো একেবারেই জানতাম না। খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। পরে ডাক্তার আমাদের আশ্বস্ত করেন”।
তিনি বলেন তার পুরো পরিবার ডাক্তারের নির্দেশ মত চলেছেন। এবং তার সন্তানের একটা অস্ত্রোপচার করিয়েছেন। এখন পর্যন্ত তারা ডাক্তারের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন।
লক্ষণ
প্রাথমিক পর্যায়ে ছেলেশিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরপরই অভিভাবকদের তার অণ্ডথলিতে স্পর্শ করে দেখতে হবে যে অণ্ডকোষ যথাস্থানে আছে কি না। যদি না পান তাহলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন। হাসপাতালে চিকিৎসকরা এই পরীক্ষা করেন।
তবে যদি অণ্ডকোষটা না পাওয়া যায় তাহলে দুই থেকে তিন সপ্তাহ পর আল্ট্রাসাউন্ড করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। দেখা যায় এটা শরীরের মধ্যে কোন একটা স্থানে রয়েছে। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে একেবারে খুঁজেই পাওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে চিন্তিত না হয়ে ছয় মাস অপেক্ষা করতে হবে। চিকিৎসকরা বলছেন অনেক সময় ছমাসের মধ্যে অণ্ডকোষ যথাস্থানে নেমে আসে।
এই সময়ে খেয়াল রাখতে হবে অণ্ডকোষটা ফুলে যাচ্ছে কীনা, লাল হয়ে যাচ্ছে কীনা, গায়ে জ্বর আসছে কীনা।ছয় মাস পর আবার একটা আলট্রাসাউন্ড করতে হবে। যদি না নেমে আসে তাহলে অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
ক্রিপঅর্কিডিজমের বিপদ কী
অণ্ডথলিতে দুইটা অন্ডকোষ থাকে। কোন কোন ক্ষেত্রে একটা নেমে এলেও আরেকটা শরীরের অন্য স্থানে আটক থাকতে পারে। এক্ষেত্রে কুঁচকি এবং কিডনির নিচে থাকে।
চিকিৎসকরা বলছেন, যদি ভূমিষ্ঠ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যদি অণ্ডকোষ না পাওয়া যায় তাহলে তিন মাস থেকে সর্বোচ্চ এক বছর অপেক্ষা করা যায়। তবে এক বছরের পর আর অপেক্ষা করা ঠিক না ।
কারণ এতে করে ঐ শিশুর অনেক জটিলতা দেখা দেয়।
অধ্যাপক সৈয়দ শাফি আহমেদ বলেন, শিশুটি প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর বন্ধ্যত্বে ভুগতে পারে। তার ক্যান্সারও হতে পারে।
তিনি বলেন, “অণ্ডকোষ শরীরের অন্য স্থানে থাকলে একটা সময় পচন ধরে সেখান থেকে ক্যান্সার হয়”।
বিজ্ঞানীরা সাধারণভাবে পুরুষদের বন্ধ্যত্বের যে কারণগুলোর কথা উল্লেখ করেন, এর মধ্যে প্রধান ক’টি কারণের মধ্যে অন্ডকোষের অস্বাভাবিকতা অন্যতম। কয়েকটা কারণ উল্লেখ করা হয়:
• কোন কোন শিশুর জন্মের সময় অণ্ডকোষ দেহের ভেতরেই রয়ে যায়। এটিও শুক্রাণুর সমস্যা ঘটাতে পারে।
• দেহের যে নালীগুলো অণ্ডকোষ থেকে শুক্রাণু বহন করে নিয়ে যায় তা জন্ম থেকে অনুপস্থিত থাকা, বা কোন রোগ বা আঘাতজনিত কারণে নালীগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়া।
• অণ্ডকোষের শিরা বড় হয়ে যাওয়া বা ভ্যারিকোসিলস।
• অন্ডকোষে কোন অস্ত্রোপচার বা হার্নিয়ার অপারেশন।
• যৌনাঙ্গের কোন সংক্রমণ যেমন ক্ল্যামাইডিয়া, গনোরিয়া, বা প্রস্টেট গ্ল্যান্ডের প্রদাহ।
• পুরুষের দেহে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, বা কম হরমোন উৎপাদন।
• ক্লাইনফেল্টার সিনড্রোম নামে এক ধরণের জেনেটিক সমস্যা।
চিকিৎসা কী
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু সার্জারি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. নুরুল আমিন বলেন, এর একমাত্র চিকিৎসা অস্ত্রোপচার।
তিনি বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই অস্ত্রোপচার করে ফেলা উচিৎ।
মি. আমিন বলেন, “৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই একটা অস্ত্রোপচার লাগে। তবে এটা ডিপেন্ড (নির্ভর) করে অন্ডকোষটি শরীরের কোথায় আছে। যদি লিঙ্গের (পুরুষাঙ্গ) কাছাকাছি থাকে তাহলে একটা সার্জারি (অস্ত্রোপচার) দরকার পরে। তবে পেটের ভিতরে অনেক ভিতরে জটিল কোন অবস্থানে থাকলে সেক্ষেত্রে একাধিক সার্জারির দরকার পড়তে পারে”।