নতুন যক্ষ্মা রোগী ১ লাখ, শনাক্তের বাইরে আরও ৩১ শতাংশ

0
75

দেশে গত তিন বছরে নতুন করে আরও প্রায় ১ লাখ যক্ষ্মা রোগী বেড়েছে। সবমিলিয়ে সারা দেশে বর্তমানে প্রায় ৪ লাখের মতো যক্ষ্মা রোগী আছে এবং তাদের মধ্য থেকে প্রতি বছর প্রায় ৪ হাজারের মতো রোগীর মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে যক্ষ্মা নির্ণয় ও চিকিৎসার আওতা বাড়াতে সরকারের সঙ্গে বেসরকারি খাতকে যুক্ত করা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। কারণ বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে আরও বেশি জনগোষ্ঠীর কাছে সময়মতো ও কার্যকর যক্ষ্মা চিকিৎসা পৌঁছানোর সুযোগ আছে। এমনকি পাবলিক-প্রাইভেট মিক্স (পিপিএম) কৌশলের মাধ্যমে উন্নত যক্ষ্মা সেবাও সবার জন্য দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

মঙ্গলবার (৪ জুন) বেলা ১১টায় রাজধানীর আইসিডিডিআর,বির সাসাকাওয়া অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ‘স্ট্রেন্দেনিং টিউবারকিউলোসিস পাবলিক-প্রাইভেট মিক্স ফর অ্যানহ্যান্সড পলিসি অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড প্রাইভেট সেক্টর এনগেজমেন্ট’ বিষয়ক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন আইসিডিডিআর,বির নির্বাহী পরিচালক।

তাহমিদ আহমেদ বলেন, সারা দেশে ৪ লাখের মতো যক্ষ্মা রোগী আছে, যাদের মধ্যে আবার ১০ হাজারের মতো রোগী আছে যাদের ড্রাগ র‌্যাজিস্টেন্স। তাদের দ্রুত চিকিৎসার আওতায় আনা জরুরি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে ২০২২ সালে ৬৯ শতাংশ যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত করা সম্ভব হলেও আরও প্রায় ৩১ শতাংশ রোগীই শনাক্তের বাইরে থেকে যায়, যা অন্য সাধারণ মানুষের জন্য খুবই আশঙ্কাজনক বিষয়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের জেলখানাগুলোতে অনেক লোক, সেখানে জায়গার সংকুলান কম। এসব জায়গায় যক্ষ্মার ট্রান্সমিশন খুবই সহজ। আইসিডিডিআর,বি জেলখানায় কাজ করছে। সহজভাবে তাদের কীভাবে চিকিৎসার আওতায় আনা যায়, সেই লক্ষ্যে আইসিডিডিআর,বি কাজ করছে। আমরা মনে করি এ ধরনের কাজগুলোতে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আইসিডিডিআর,বির নির্বাহী পরিচালক বলেন, আইসিডিডিআর,বির তত্ত্বাবধানে যেসব চিকিৎসক প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন, তাদের বলা হয়েছে যক্ষ্মা রোগী পেলে আমাদের কাছে পাঠাবেন। তারা আসার পর তাদের মধ্যে যক্ষ্মার জীবাণু আছে কি না, সেটা আমরা পরীক্ষা করি। এসব চিকিৎসকদের পাঠানো রোগীর থেকে প্রায় ৫০ হাজারের মতো যক্ষ্মা রোগীকে আমরা শনাক্ত করেছি। এই যক্ষ্মা রোগীদের যদি শনাক্ত করা না যেত, তাহলে তারা স্বাভাবিক মানুষের মতোই যক্ষ্মা নিয়ে সমাজে ঘুরে বেড়াত এবং তাদের থেকে আরও বড় একটা জনগোষ্ঠীর মধ্যে ট্রান্সমিশন ঘটত।

অনুষ্ঠানে ড. তাহমিদ আহমেদ বাংলাদেশে যক্ষ্মা গবেষণায় আইসিডিডিআর,বির ভূমিকা ও যক্ষ্মা বিষয়ক জাতীয় নীতি ও নির্দেশিকা তৈরিতে ও বাস্তবায়নে আইসিডিডিআর,বির অবদানের কথা তুলে ধরেন।

জানা গেছে, আইসিডিডিআর,বি জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (এনটিপি) ও দ্য স্টপ টিবি পার্টনারশিপের সহযোগিতায় যক্ষ্মা চিকিৎসা ও নির্মূলে পলিসি অ্যাডভোকেসি ও বেসরকারি খাতের যুক্তকরণ শীর্ষক একটি সভার আয়োজন করে। যক্ষ্মা মোকাবিলায় বাংলাদেশের অগ্রগতির জন্য সক্ষমতা বৃদ্ধি ও বেসরকারি খাতকে যুক্ত করার লক্ষ্যে এ সভার আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে ‘জার্নি টু কিউর’ নামের একটি অডিও-ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনার মাধ্যমে যক্ষ্মা মোকাবিলায় বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও সহযোগিতা নিয়ে আলোকপাত করা হয়। সেখানে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কার্যক্রমের ওপর বেসরকারি খাতের নানা প্রচেষ্টাও তুলে ধরা হয়। এছাড়া ‘বাংলাদেশে পাবলিক-প্রাইভেট মিক্স পলিসি অ্যাডভোকেসি’ বিষয়ে একটি উপস্থাপনায় বিভিন্ন নীতি ও বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়।