ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা। এতে ভুগছেন বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষ। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে চিকিৎসার পাশাপাশি নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনও জরুরি। এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে এবং জটিলতা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ডায়াবেটিস মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়ছে। ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা প্রয়োজন কারণ শুধু লক্ষ লক্ষ মানুষ এতে আক্রান্ত হয় না, জনসংখ্যার একটি বড় অংশ প্রিডায়াবেটিক।
জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন করে ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিরা এটি নিয়ন্ত্রণ করতে এবং তাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে। এই পরিবর্তনগুলোর মধ্যে রয়েছে ডায়েট, ব্যায়াম, স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট এবং অন্যান্য কিছু বিষয়। যেগুলো রক্তে শর্করার মাত্রা এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আপনাকে কিছু কাজ করতে হবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক-
১. অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বাদ দিন
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনগুলোর মধ্যে একটি হলো অস্বাস্থ্যকর খাবার বাদ দিয়ে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ করা। সুষম খাদ্য বেছে নিন যাতে প্রচুর ফল, শাক-সবজি, দানা শস্য, চর্বিহীন প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি থাকে। প্রক্রিয়াজাত খাবার, চিনিযুক্ত স্ন্যাকস এবং পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট খাওয়া সীমিত করুন, কারণ এগুলো রক্তে শর্করার বৃদ্ধি ঘটাতে পারে। এসবের পরিবর্তে কম গ্লাইসেমিক সূচকযুক্ত খাবার বেছে নিন। সেসব খাবার শক্তি সরবরাহ করবে এবং সারাদিন রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে।
২. অলসতাকে বিদায় দিন
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ অপরিহার্য। সপ্তাহের বেশিরভাগ দিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট করে মাঝারি-তীব্র ব্যায়ামের লক্ষ্য রাখুন। এর মধ্যে হাঁটা, সাঁতার, সাইকেল চালানো বা শক্তি প্রশিক্ষণের মতো ব্যায়াম থাকতে পারে। ব্যায়াম রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে, ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করতে এবং ডায়াবেটিসের সঙ্গে সম্পর্কিত কার্ডিওভাসকুলার জটিলতার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। আপনি উপভোগ করেন এমন কার্যকলাপ খুঁজুন, সক্রিয় এবং সুস্থ থাকার জন্য সেগুলোকে আপনার রুটিনের একটি নিয়মিত অংশ করে নিন।
৩. অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেলুন
স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ এবং জটিলতার ঝুঁকি কমানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি অতিরিক্ত ওজনের বা স্থূলকায় হন, তবে অল্প পরিমাণে ওজন কমালে তা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হবে। ডায়েট এবং ব্যায়ামের সংমিশ্রণের মাধ্যমে ধীরে ধীরে ওজন কমানোর দিকে মনোনিবেশ করুন। বাস্তবসম্মত লক্ষ্য নির্ধারণ করুন এবং দীর্ঘমেয়াদী সাফল্য অর্জনের জন্য আপনার জীবনযাপনে পরিবর্তন করুন।
৪. রক্তে শর্করার মাত্রা পর্যবেক্ষণ করুন
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ এবং জটিলতা প্রতিরোধের জন্য নিয়মিত রক্তে শর্করার মাত্রা পর্যবেক্ষণ করা অপরিহার্য। ব্লাড গ্লুকোজ মিটার বা ক্রমাগত গ্লুকোজ মনিটরিং সিস্টেম ব্যবহার করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আপনার রক্তে শর্করার মাত্রার উপর নজর রাখুন। এই তথ্যগুলো আপনাকে বুঝতে সাহায্য করে যে কীভাবে আপনার খাদ্য, ব্যায়াম, ওষুধ এবং অন্যান্য কারণগুলো রক্তে শর্করার মাত্রাকে প্রভাবিত করে। রক্তে শর্করার নিরীক্ষণের বিষয়ে সতর্ক এবং সক্রিয় থাকার মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে।
৫. স্ট্রেস দূরে রাখুন
দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। শিথিলতা এবং সুস্থতার প্রচারের জন্য আপনার দৈনন্দিন রুটিনে স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট কৌশলগুলো যোগ করুন। ধ্যান, গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম, যোগব্যায়াম বা প্রকৃতিতে সময় কাটানোর মতো অভ্যাস করুন। এমন কাজ করুন যা আপনাকে শান্ত করতে এবং স্ট্রেস উপশম করতে সহায়তা করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য আপনার মানসিক স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে হবে। সেজন্য নিজের প্রতি যত্নশীল হোন।