ডায়রিয়ায় যেসব ভুল বিপজ্জনক!

0
136

কয়েকটি সাধারণ ভুলে ‘ডায়রিয়া’ গুরুতর বিপদ ডেকে আনতে পারে আপনার জীবনে। তা কি আপনি জানেন? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে এ রোগকে তেমন গুরুত্ব দেন না বেশিরভাগ মানুষ। অথচ এখনও ডায়রিয়ার কারণে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। কোন পরিস্থিতিতে সাধারণ এ রোগটি মৃত্যুর ঝুঁকিকে ডেকে আনে সে বিষয়ে অনেকেরই পরিষ্কার ধারণা নেই। যে কারণে রোগটি নিয়ে ভুলের পরিমাণ বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কয়েকটি সাধারণ ভুল কখনই ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে করা যাবে না। না জানার কারণে মানুষের এসব সাধারণ ভুলই রোগীর মৃত্যুর কারণ হয়ে ওঠে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

চিকিৎসা শাস্ত্র অনুযায়ী, গরমকালে ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। ঠিকভাবে পানি ও লবণ পূরণ করা হলে, এটি কখনো গুরুতর আকার ধারণ করে না।

চিকিৎসকরা বলছেন-

১। প্রতিবার পাতলা পায়খানার সঙ্গে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি ও লবণ বের হয়ে যায়। তা পূরণে সঠিক নিয়মে রোগীকে খেতে দিতে হবে ওরস্যালাইন।
২। এর পাশাপাশি চলবে স্বাভাবিক খাবারও।
৩। এ সময় রোগীকে বেশি বেশি তরল খাবার খেতে দিতে হবে।
৪। ৩ থেকে ৫ দিনের মধ্যে ডায়রিয়া প্রাকৃতিকভাবেই ভালো হয়ে যায়।

ডায়রিয়ায় বিপজ্জনক ভুল

১। ডায়রিয়ার সময় রোগীকে ওর স্যালাইন দিতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন অনেকে। উচ্চ রক্তচাপ আছে, এমন রোগীরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে ওরস্যালাইন খেতে বিভ্রান্তিতে ভোগেন রক্ত চাপ বেড়ে যাওয়ার ভয়ে।

আবার ওরস্যালাইনে চিনি বা গ্লুকোজ থাকে, তাই ডায়াবেটিস রোগীরা খেতে ভয় পান। অথচ চিকিৎসকরা বলছেন, ডায়রিয়া হলে এসব মাথায় আনার কোনো দরকারই নেই। যে কোনো সমস্যায় চালিয়ে যেতে হবে ওর স্যালাইন।

২। দ্বিতীয় ভুলটি হলো স্যালাইন তৈরিতে গাফিলতি। নিয়ম না মেনে নিজের মনের মতো করে বাড়িতে অনেকে গুড়, লবণ, পানি দিয়ে স্যালাইন তৈরি করেন। বাজারের প্যাকেট স্যালাইন তৈরিতেও নিয়ম মানেন না পানির পরিমাপের। এক্ষেত্রে লবণ ও পানির মাত্রার গড়মিল হয় যা রোগীকে মৃত্যুর দিকে ঢেলে দেয় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

৩। স্যালাইন তৈরির প্রকৃত নিয়ম হলো আধা লিটার পানিতে এক মুঠো গুড়, এক চিমটি লবণ মিশিয়ে তৈরি করা। বাজারের প্যাকেট ওর স্যালাইন তৈরি ক্ষেত্রে আধা লিটার পানিতে প্যাকেটের পুরো ওষুধ দিয়ে স্যালাইন তৈরি করতে হয়। কিন্তু অনেকেই কৃপণতা করে তা করেন না।

তৈরি ওর স্যালাইন ১২ ঘন্টা পর্যন্ত খাওয়া যায়। এরপর তা ফেলে দিতে হয়। কারণ ১২ ঘন্টা পর তৈরি স্যালাইনে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ ঘটে। এ পানীয় খেলে ডায়রিয়া রোগীর অবস্থা আরও খারাপের দিকে চলে যায়। অথচ এ বিষয়টিও অনেকে গুরুত্ব দেন না।

৪। স্যালাইন খাওয়ার নিয়মও অনেকে জানেন না। নিজের ইচ্ছামতো তৈরি স্যালাইন খাওয়া যাবে না। এক সঙ্গে সব স্যালাইন বা দুই তিন বারে তৈরি স্যালাইন খাওয়ার নিয়ম নেই।

চিকিৎসকরা বলছেন, প্রতিবার পায়খানা হওয়ার পর স্যালাইন খাওয়া এবং অল্প করে সারাদিন বারবার খাওয়ার অভ্যাস রাখতে হবে। এর বাইরে সারাদিন পানি ও তরল খাবার যেমন-স্যুপ, ডাবের পানি ইত্যাদি খেতে হবে।

৫। আরও যে ভুল মানুষ করেন তা হলো বমি বা পাতলা পায়খানা হলেই ফার্মেসি থেকে তা বন্ধের জন্য ওষুধ খান, যা একেবারেই ঠিক নয়। কারণ ডায়রিয়ায় একমাত্র স্যালাইনই যথেষ্ট। এর বাইরে কোনোভাবেই রোগীকে ওষুধ অর্থাৎ অ্যান্টিবায়োটিক খেতে দেয়া যাবে না। এতে রোগীর শরীরে ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে শুরু করে।

উল্লেখিত এসব সাধারণ ভুলই ডায়রিয়ার রোগীর বিপদ ডেকে আনে। তাই রোগীকে সুরক্ষিত ও বিপদমুক্ত রাখতে এসব বিপজ্জনক ভুল করা থেকে বিরত থাকুন।

বিপজ্জনক সংকেত

ডায়রিয়ায় মৃত্যুর মূল কারণ শরীরে লবণ ও পানিশূন্যতা। এ ঘাটতি মেটাতে তাই সবচেয়ে কার্যকরী চিকিৎসা খাবার স্যালাইন। নিয়ম মেনে খাবার স্যালাইন খেলে রোগী ধীরে ধীরে নিজেই সেরে ওঠেন।

কিন্তু কখনও কখনও ডায়রিয়া রোগীর মধ্যে কিছু বিপজ্জনক লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। যেমন ৫ দিন পরেও পাতলা পায়খানা থাকা, পায়খানার সঙ্গে রক্ত যাওয়া, জ্বর আসা, পেট ব্যথা ও বমি হওয়া। শুধুমাত্র এমন পরিস্থিতিতে রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হয়। এক্ষেত্রে দ্রুত একজন চিকিৎসকের কাছে যান। তার পরামর্শ গ্রহণ করে রোগীকে সুস্থ করে তুলুন।