সব শিশুরই মাঝে মাঝে মন খারাপ থাকে। এটি তাদের স্বাভাবিক বেড়ে ওঠার একটি অংশ। কিন্তু এই আবেগগুলো উদ্বেগজনক হতে পারে, যখন দীর্ঘ সময় ধরে এগুলো তীব্রভাবে অনুভূত হয়। বিশেষ করে তা যদি আপনার সন্তানের সামাজিক, পারিবারিক ও স্কুল জীবনকে প্রভাবিত করে।
যদিও বিষণ্নতা মাঝে আশার আলো খুঁজে পাওয়া কঠিন। মনে রাখবেন বিষণ্ণতার চিকিৎসা করা যেতে পারে এবং আপনার সন্তানকে সাহায্য করার জন্য আপনিও অনেক কিছু করতে পারেন।
বিষণ্নতা কী
বিষণ্নতা হলো সবচেয়ে সাধারণ ধরনের মানসিক স্বাস্থ্যগত একটি অবস্থা এবং প্রায়ই উদ্বেগের পাশাপাশি এটি বিকাশ লাভ করে। বিষণ্নতা হালকা ও স্বল্পস্থায়ী বা গুরুতর ও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। কিছু মানুষ শুধু একবার বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয়, তবে অন্যরা এটি একাধিকবার অনুভব করতে পারে। বিষণ্নতা আত্মহত্যার দিকে ধাবিত করতে পারে, তবে যথাযথ সহায়তা করা হলে এটি প্রতিরোধযোগ্য।
বিষণ্নতার কারণ
মানসিক নির্যাতন, স্কুলে সহিংসতা, ঘনিষ্ঠ কারো মৃত্যু অথবা পারিবারিক সহিংসতা বা ভাঙনের মতো কিছু সমস্যার প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিষণ্নতা দেখা দিতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে মানসিক চাপে থাকার পর কেউ বিষণ্নতায় আক্রান্ত হতে পারে। এটি পরিবারেও চলতে পারে। কখনো কখনো আমরা জানি না কেন এটি ঘটে।
শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের মাঝে বিষণ্নতা
শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের মাঝে দীর্ঘ সময় ধরে অসুখী ভাব বা বিরক্তি হিসেবে বিষণ্নতা দেখা দিতে পারে। একটু বড় শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের মাঝে বিষণ্নতা দেখা দেওয়া খুব সাধারণ বিষয়। তবে প্রায়ই এটি অজানা অবস্থায় রয়ে যায়। কিছু শিশু হয়তো বলতে পারে যে তারা অসুখী বোধ করছে। আবার অন্যরা বলতে পারে তারা নিজেদের আঘাত বা এমনকি হত্যা করতে চায়।বিষণ্নতায় আক্রান্ত শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের নিজের ক্ষতি করার ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই এই ধরনের প্রতিক্রিয়া সবসময় গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া উচিত।
বিষণ্নতার লক্ষণ ও উপসর্গ
একেক শিশুর ক্ষেত্রে বিষণ্নতা একেকভাবে অনুভব হতে পারে। এখানে বিষণ্নতার কিছু সাধারণ লক্ষণ ও উপসর্গ দেওয়া হলো:
শারীরিক লক্ষণ ও উপসর্গ
ক্লান্তি বা কম শক্তি; এমনকি বিশ্রামে থাকলেও। অস্থিরতা বা মনোযোগ দিতে অসুবিধা। দৈনন্দিন কাজকর্ম সম্পাদনে অসুবিধা ক্ষুধা বা ঘুমের নিয়মে পরিবর্তন। যন্ত্রণা বা ব্যথা যার কোনো সুস্পষ্ট কারণ নেই।
মানসিক লক্ষণ ও উপসর্গ
অবিরাম দুঃখ, উদ্বেগ বা বিরক্তি। বন্ধুবান্ধব ও কাজকর্মে আগ্রহ হারানো, যা তারা সাধারণত উপভোগ করে। অন্যদের কাছ থেকে নিজেদের সরিয়ে নেওয়া এবং একাকীত্ব। নিজেকে গুরুত্বহীন ভাবা, আশাহীনতা বা অপরাধবোধ কাজ করা। এমন সব ঝুঁকি নেওয়া যা সাধারণত তারা নেয় না। নিজের ক্ষতি বা আত্মহত্যার চিন্তা। এই উপসর্গগুলোর একটি বা একাধিক দেখা দেওয়ার অর্থ এই নয় যে একটি শিশু বিষণ্নতায় আক্রান্ত। তবে এমন অনেক উপায় আছে যার মাধ্যমে আপনি সন্তানকে এই অবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নিতে সহায়তা করতে পারেন।
আপনি যদি আপনার সন্তানের জন্য চিন্তিত হন, তাহলে পরামর্শের জন্য বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দ্বিধা করবেন না।