মানবদেহের পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের একটি হল স্বাদ। এই অনুভূতিটি কেবল আমাদের খেতে আনন্দ দেয় না, এটি ক্ষতিকারক, বাসি বা বিষাক্ত কিছু খাওয়ার বিষয়ে আমাদের সতর্ক করতে পারে।
অনেকেরই মুখে খাবারের স্বাদ মিষ্টি, টক, নোনতায় বদলে যায়। আবার কারও মুখে খাবারের স্বাদ ধাতব বস্তুর মতো লাগে। চিকিৎসকেরা বলছেন, মুখের স্বাদের সঙ্গে শারীরবৃত্তীয় নানা জটিলতার সম্পর্ক রয়েছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, এটি দীর্ঘস্থায়ী অবস্থা নয়।
তিক্ত স্বাদের কারণ
মুখের তিক্ত স্বাদের বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, যার মধ্যে মৌখিক স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে শুরু করে চিকিৎসার অবস্থা এবং নানা রকমের ওষুধের ব্যবহার।
১. মুখের স্বাস্থ্য সমস্যা
আপনার মুখের যত্নের রুটিনে তিক্ত স্বাদের কারণ লুকিয়ে রাখতে পারে। নিয়মিত মুখের যত্ন না নিলেও অনেক সময় এরকম স্বাদ অনুভূত হয়।
২. মাড়ির রোগ
এটা অনেক সময় মাড়ির রোগের কারণেও হতে পারে। মুখে তিক্ত স্বাদ বা অদ্ভুত গন্ধ মাড়ি থেকে রক্তপাতের সাথে যুক্ত। নিয়মিত দাঁতের যত্ন এবং মাড়ির চিকিৎসা এই তিক্ত স্বাদ পরিবর্তনের মূল সমাধান।
৩. মুখে ব্যাকটেরিয়া
নিয়মিত দাঁত ব্রাশ না করা বা ফ্লস না করার ফলে মুখে ব্যাকটেরিয়া তৈরি হতে পারে। যার ফলে অনেক সময় তিক্ত স্বাদ তৈরি হতে পারে। তাই এর সমাধানে দিনে দুবার দাঁত ব্রাশ করা, একবার ফ্লস করা এবং মুখের স্বাস্থ্যকে ব্যাকটেরিয়া মুক্ত রাখতে হবে।
৪. বার্নিং মাউথ সিনড্রোম
বার্নিং মাউথ সিন্ড্রোম মুখে গরম এবং তিক্ত স্বাদ নিয়ে আসে। এই অবস্থা চিকিৎসার মাধ্যমে সারিয়ে তোলা যেতে পারে। লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসক ট্রাইসাইক্লিক এন্টিডিপ্রেসেন্টস, বেনজোডিয়াজেপাইনস, গ্যাবাপেন্টিন বা সাইকোথেরাপি চিকিৎসা দিতে পারে যা মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান করা যায়।
৫. মুখের আঘাত বা ওরাল সার্জারি
অনেক সময় মুখের ভেতরে আঘাত পেলে বা মুখে অস্ত্রোপচার হলেও তিক্ত স্বাদ অনুভূত হতে পারে। এক্ষেত্রে ক্ষত নিরাময় এবং রক্তপাত বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত স্বাদটি লেগে থাকে।
৬. সর্দি এবং সাইনাসের সমস্যা
সাধারণত সর্দি বা সাইনাসের সমস্যা থেকেও তিক্ত স্বাদ সৃষ্টি হয়। তবে এটি দীর্ঘস্থায়ী হয়না। সংক্রমণ কমে যাওয়ার সাথে সাথেও মুখের স্বাদ স্বাভাবিক হয়ে যায়।
৭. ডায়াবেটিস এবং লো ব্লাড সুগার
আপনার যদি ডায়াবেটিস বা রক্তে কম শর্করা থাকে তবে স্বাদের অনুভূতি পরিবর্তন হতে পারে। যখন রক্তে শর্করা খুব কম হয়ে যায়, তখন মুখে তিক্ত স্বাদ অনুভব হতে পারে।
৮. কিডনি রোগ
অনেক সময় কিডনির সমস্যার কারণে শরীরে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যায় যা মুখের স্বাদকে প্রভাবিত করতে পারে। যার ফলে কিডনির রোগের কারণে মুখে তিক্ত স্বাদ দেখা দিতে পারে।
৯. গর্ভাবস্থা এবং হরমোনের পরিবর্তন
হরমোনের পরিবর্তন অনেক সময় শরীরে স্বাদ এবং গন্ধের সাথে তালগোল পাকিয়ে ফেলে। বিশেষ করে গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে প্রায়শই মুখে তিক্ত স্বাদে অনুভূত হয় এবং এই স্বাদের ফলে প্রায়ই বমি হয়।
১০. ওষুধের ব্যবহার
কিছু কিছু ওষুধের কারণেও অনেক সময় মুখের স্বাদ বদলে যায়। যেমন কিছু অ্যান্টিবায়োটিক, মানসিক চাপের ওষুধ, রক্তচাপের ওষুধ, ডায়াবেটিসের ওষুধ, আয়রন ট্যাবলেট এবং কিছু ভিটামিনের কারণে অনেক সময় মুখে তিক্ত স্বাদ হতে পারে।
১১. ক্যান্সার থেরাপি
ক্যান্সার থেরাপি যেমন কেমোথেরাপি, বিষাক্ত রাসায়নিকের সংস্পর্শ, খাদ্য অ্যালার্জি অনেক সময় মুখে তিক্ত স্বাদ বিকাশে ভূমিকা পালন করে।
তিক্ত স্বাদ যেভাবে দূর করবেন
সাধারণত মুখে তিক্ত স্বাদ বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই নিজ থেকে চলে যায়। তবে অনেক সময় এটি কিছু সময়ের জন্য স্থায়ী ও হয়। তাই এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে চাইলে প্রথমেই বের করতে হবে যে কোন সমস্যার কারণে এ রকম স্বাদ অনুভূত হচ্ছে। সমস্যা বের করে সমাধানের মাধ্যমে মুখের তিক্ত স্বাদ পরিবর্তন করা যায়।
এছাড়া সব সময় মুখের ভেতরে সুস্বাস্থ্য ও ব্যাকটেরিয়ামুক্ত স্বাস্থ্য বজায় রাখতে হবে। নিয়মিত মুখ পরিস্কার করতে হবে এবং নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করতে হবে।