মানব শরীরের জন্য একটি অপরিহার্য খনিজ আয়রন। সুস্থ ইমিউন সিস্টেম, পেশী শক্তি এবং শক্তির জন্য লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনের জন্য জরুরি আয়রন। এছাড়া শিশুদের সুস্থ মানসিক বিকাশ এবং বৃদ্ধির জন্যও উপাদানটি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা আয়রনের অভাবে শরীরে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। শরীরে মিনারেলের অভাব দেখা দিলে আয়রনের ঘাটতিও দেখা দেয়।
আয়রনই শরীরে হিমোগ্লোবিন তৈরি করে। রক্তে যথেষ্ট পরিমাণে হিমোগ্লোবিন না থাকলে শরীরের পেশীগুলি দুর্বল হয়ে পড়ে। বিশেষ করে নারীরাই আয়রনের ঘাটতিতে বেশি ভোগেন। যেহেতু শরীর নিজে থেকে আয়রন তৈরি করতে পারে না, তাই আমাদের খাদ্য থেকে পর্যাপ্ত আয়রন গ্রহণ করতে হয়। চলুন জেনে নিই, শরীরে আয়রনের অভাব হলে বুঝবেন যেভাবে:
অস্বাভাবিক ক্লান্তি
ক্লান্তি বোধ করা আয়রনের অভাবজনিত রক্তাল্পতার একটি সাধারণ লক্ষণ। আপনি ক্লান্তিবোধ করেন; কেননা, আপনার শরীরে হিমোগ্লোবিন নামক প্রোটিন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় আয়রনের অভাব রয়েছে। যা আপনার শরীরের চারপাশে অক্সিজেন বহন করতে সাহায্য করে। পর্যাপ্ত হিমোগ্লোবিন ছাড়া, কম অক্সিজেন আপনার টিস্যু এবং পেশীগুলোতে পৌঁছায়, তাদের শক্তি থেকে বঞ্চিত করে।
ত্বক ফ্যাকাশে দেখায়
ত্বক স্বাভাবিকের চেয়ে ফ্যাকাশে দেখায়। আয়রণের ঘাটতি হলে মুখ, চোখের নিচের চোখের পাতা বা নখের মতো অংশে স্বাভাবিকের চেয়ে ফ্যাকাশে দেখায়। এই ফ্যাকাশে ভাবটা হয় হিমোগ্লোবিনের কম মাত্রার কারণে, যা রক্তকে লাল করে দেয়।
শ্বাসকষ্ট
শ্বাসকষ্ট হলো আয়রনের অভাবের একটি উপসর্গ। হিমোগ্লোবিন আপনার লাল রক্ত কোষকে আপনার শরীরের চারপাশে অক্সিজেন বহন করতে সহায়তা করে। আয়রনের ঘাটতির সাথে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম হলে অক্সিজেনের মাত্রাও কম থাকে। অর্থ্যাৎ আপনার পেশীগুলো অক্সিজেন গ্রহণ করবে না।
মাথাব্যথা
মাথা ঘোরা এবং হালকা মাথাব্যথা বোধ হতে পারে। কেননা ঘন ঘন মাথাব্যথা আয়রনের ঘাটতির লক্ষণ।
হৃদস্পন্দন
হৃদস্পন্দন আয়রনের অভাবজনিত রক্তাল্পতার আরেকটি লক্ষণ। হিমোগ্লোবিন হলো লোহিত রক্তকণিকার প্রোটিন, যা আপনার শরীরের চারপাশে অক্সিজেন পরিবহনে সাহায্য করে। আয়রনের ঘাটতিতে কম হিমোগ্লোবিনের মাত্রা মানে হৃৎপিণ্ডকে অক্সিজেন বহনের জন্য অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়। আয়রনের অভাবে বুক ধড়ফড় করা বা বুক ভার হয়ে থাকার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
শুষ্ক ত্বক ও চুল
আয়রনের অভাবে আপনার ত্বক শুষ্ক বা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আয়রনের ঘাটতি আপনার রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমিয়ে দেয়, যা চুলের বৃদ্ধি ঘটানো কোষগুলোতে পাওয়া অক্সিজেনের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। অক্সিজেনের অভাবে ত্বক এবং চুল শুষ্ক এবং দুর্বল হয়ে যায়।
জিহ্বা বা মুখের ফোলাভাব
ত্বকে ফুটে ওঠে রুক্ষতা। আয়রনের গুরুতর ঘাটতি হলে ঠোঁট, জিভ ফুলে ওঠে। কখনও কখনও আপনার মুখের ভেতরে বা বাইরের পরিবর্তনগুলো আয়রনের অভাবজনিত রক্তাল্পতা নির্দেশ করে।
মাংসপেশিতে ব্যথা
আয়রনের অভাবে আপনার মাংসপেশিতে ব্যথা হতে পারে। এই ব্যথা সাধারণত রাতে বেশি হয় এবং ঘুমাতে অসুবিধা হয়। আয়রনের ঘাটতিজনিত রক্তাল্পতায় আক্রান্ত ব্যক্তি সাধারণ জনসংখ্যার তুলনায় ছয়গুণ বেশি।