স্কেলিং-ফিলিং-রুট ক্যানেল কী? দাঁতের কোন সমস্যার কোন চিকিৎসা

0
150

দাঁত শরীরের একটি অপরিহার্য অংশ। এর যেকোনো সমস্যায় মোটেও অবহেলা করা উচিৎ নয়। দাঁতের চিকিৎসা একটি নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। জন্মের পরপরই কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, শিশুর মুখে দাঁত ওঠে। ওই দাঁত দেখা গেলে শিশুকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়ে ফেলে দিতে হবে, তা না হলে শিশু ও মায়ের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার বয়স্কদেরও দাঁতের চিকিৎসা করাতে হয়। দাঁতের কোনো সমস্যা না হলেও বছরে দুইবার চিকিৎসককে দেখালে দাঁত ভালো রাখা সম্ভব হয়।

কোন ডাক্তারের কাছে যাবেন?

দাঁতের চিকিৎসা নিতে গিয়ে অনেকে প্রতারিত হন এমন ঘটনা অনেক আছে। সেক্ষেত্রে সেবাপ্রার্থীকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, আপনি যে চিকিৎসকের কাছে গিয়েছেন তিনি বিডিএস ডিগ্রিধারী কি না। যদি বিডিএস ডিগ্রিধারী হন, তাহলে তিনি দাঁতের চিকিৎসক। এ ছাড়া সরকারি হাসপাতালেও রোগীরা দাঁতের চিকিৎসা নিতে পারেন।

কোন সমস্যার কোন চিকিৎসা

দাঁতের পরীক্ষা : রুটিন ডেন্টাল চেকআপের মধ্যে আপনার দাঁত, মাড়ি, জিহ্বা এবং অন্য মৌখিক টিস্যুগুলোর একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা করা হয়, যাতে কোনো সম্ভাব্য সমস্যা আগেভাগেই শনাক্ত করা যায়।

স্কেলিং : নিয়মিত ডেন্টাল ক্লিনিংয়ে আপনার দাঁত থেকে প্লাক, টারটার (কঠিন ফলক) এবং দাগ অপসারণ জরুরি। এটি গহ্বর, মাড়ির রোগ এবং নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।

ফিলিং : ডেন্টাল ফিলিং অথবা ক্ষয় হওয়া দাঁত বিশেষ মেডিসিনের মাধ্যমে পূরণ করা জরুরি। দাঁতের ক্ষয়প্রাপ্ত অংশ অপসারণ করে এবং অ্যামালগাম বা সিরামিকের মতো উপাদান দিয়ে স্থান পূরণ করে গহ্বরের চিকিৎসা করা হয়।

রুট ক্যানেল থেরাপি : যখন দাঁতের মজ্জা (অভ্যন্তরীণ অংশ) সংক্রমিত হয় বা স্ফীত হয়, তখন এই চিকিৎসা করা হয়। সংক্রমিত টিস্যু সরানো হয় এবং পরে সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য দাঁতটি সিল করা হয়।

দাঁত অপসারণ : যখন একটি দাঁত গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ক্ষয়প্রাপ্ত হয় বা আঁকাবাঁকা, উঁচু-নিচুর কারণ হয়, তখন এটি তোলার প্রয়োজন হতে পারে। ইনফেকশনজনিত সমস্যা সৃষ্টি করলে সাধারণত আক্কেল দাঁতও তোলা হয়।

ডেন্টাল ক্রাউন : ক্রাউন হলো কাস্টম-মেড ক্যাপ, যা ক্ষতিগ্রস্ত বা দুর্বল দাঁতকে তাদের আকৃতি, শক্তি এবং দাঁতের গঠন পুনরুদ্ধার করতে ঢেকে রাখে।

ডেন্টাল ব্রিজ : অপসারিত অথবা হারিয়ে যাওয়া প্রাকৃতিক দাঁত ডেন্টাল ব্রিজ বা ইমপ্লান্টের মাধ্যমে আর্টিফিশিয়াল বা নকল দাঁত প্রতিস্থাপন করা হয়।

ডেন্টাল ইমপ্লান্ট : ইমপ্লান্ট বা টাইটেনিয়াম স্ক্র হলো কৃত্রিম দাঁতের শিকড়, যা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চোয়ালের হাড়ে স্থাপন করা হয়। তারা প্রতিস্থাপন দাঁতের জন্য একটি স্থিতিশীল ভিত্তি প্রদান করে যেমন—মুকুট, ক্যাপ বা ডেনচার।

ডেনচার : ডেনচার হলো যে জায়গায় দাঁত নেই সে জায়গা এবং আশপাশের টিস্যুগুলোর জন্য অপসারণযোগ্য প্রতিস্থাপন। এগুলো আংশিক (কিছু দাঁত প্রতিস্থাপন) বা সম্পূর্ণ (সব দাঁত প্রতিস্থাপন) হতে পারে।

অর্থোডন্টিক ট্রিটমেন্ট : অর্থোডনটিক্সে আরো ভালো কার্যকারিতা এবং নান্দনিকতার জন্য দাঁত ও চোয়ালের সারিবদ্ধতা সংশোধন করতে ব্রেসেস, অ্যালাইনার বা অন্যান্য যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়।

দাঁত সাদা করা : দাঁত সাদা করার পদ্ধতিগুলো দাঁত থেকে দাগ এবং বিবর্ণতা দূর করতে ব্যবহৃত হয়।

মাড়ির চিকিৎসা : এই চিকিৎসা মাড়ির নিচের অংশ থেকে প্লাক এবং টারটার অপসারণের জন্য স্কেলিং এবং রুট প্ল্যানিংয়ের মাধ্যমে মাড়ির রোগ যেমন—মাড়ির প্রদাহ ও পিরিয়ডোনটাইটিসকে মোকাবেলা করে।

মাউথগার্ডস : কাস্টম-মেড মাউথগার্ড খেলাধুলার সময় দাঁত রক্ষার জন্য বা দাঁত পিষে যাওয়া (ব্রুকসিজম) বা টেম্পোরোম্যান্ডিবুলার জয়েন্ট (টিএমজে) রোগের মতো সমস্যার সমাধানে ব্যবহৃত হয়।

খিলাল ব্যবহার করা যাবে কি?

অনেক সময় দাঁতের মাঝে খাবার আটকে যায়। তা বের করতে অনেকেই কাঠি বা খিলাল ব্যবহার করেন, যা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এক্ষেত্রে সবাইকে ডেন্টাল ফ্লক্স ব্যবহার করতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।

নিয়মিত দাঁতের যত্ন করবেন যেভাবে

দিনে দুই বেলা দাঁত ব্রাশ করতে হবে। সকালে খাবারের পর আর রাতে খাবার গ্রহণ শেষে। এটি যদি কেউ নিয়মিত করে থাকেন, তাহলে অনেক সমস্যা থেকে দাঁত সুরক্ষিত রাখা সম্ভব হবে। এ ছাড়া ব্রাশ করার সময় খেয়াল রাখতে হবে, দাঁতের ওপর ও ভেতরের সবখানেই যেন ব্রাশ ঠিকভাবে পৌঁছায়। আর অবশ্যই ভালো মানের ব্রাশ ব্যবহার করতে হবে। কোয়ালিটি ব্রাশ না হলে তা দাঁতের ক্ষতির কারণ হতে পারে। গুল, তামাকসহ যেসব খাবার দাঁতের ক্ষতি করতে পারে সেগুলো গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে।