প্রায় সব মৌসুমেই ঠাণ্ডা লেগে নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার সমস্যায় কম-বেশি সবারই ভুগতে হয়। বাতাসে দূষণের মাত্রা বেড়ে গেলে শরীরে ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের আধিক্যও বেড়ে যেতে থাকে। এতে করে ধুলা-বালি বা ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের আক্রমণের প্রথম ধাপ হলো নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া।
বন্ধ নাকে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে, অস্বস্তি বোধ হয়। কোনো কাজেই মন বসে না। আবার বার বার ওষুধ দেওয়াও শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
নাক কেন বন্ধ হয়?
ধুলা-বালি সহ নানারকম কারণে নাক বন্ধ হতে পারে। এটি কয়েকদিন থেকে শুরু করে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী ও হতে পারে। তবে দীর্ঘসময় স্থায়ী হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
১. ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাল এবং ছত্রাক সংক্রমণ
২. সাধারণ সর্দি
৩. সাইনোসাইটিস
৪. অ্যালার্জি
৫. হাঁপানি
৬. নাকের পলিপ
৭. রাসায়নিকের সংস্পর্শ
৮. পরিবেশগত কারণ (ধুলা-বালি, পশুর পশম ইত্যাদি)
নাক বন্ধের ঘরোয়া সমাধান
তাই ঘরে বসেই সহজ কিছু উপায়ে বন্ধ নাকের সহজ চিকিৎসা করা যেতে পারে। নিচে কিছু উপায় দেয়া হল,
১. বাষ্প শ্বাস নেয়া
স্টিম ইনহেলেশন বা বাষ্পের মাধ্যমে শ্বাস নেয়া বন্ধ নাক খোলার জন্য অনেক পুরোনো এবং সহজ সমাধান। একটি পাত্রে গরম পানি নিয়ে বাষ্প শ্বাস নেওয়ার জন্য মাথার উপর তোয়ালে দিয়ে ঢেকে নিন। চাইলে পানিতে পিপারমেন্ট বা মেন্থল যোগ করে নেয়া যায়।
তবে বর্তমানে স্টিম ইনহেলেশনের জন্য বিভিন্ন ধরনের স্টিমার বা মেশিন পাওয়া যায়। এগুলোতে প্রতিদিন ২-৩ বার বাষ্প নিলে বন্ধ নাক খুব দ্রুত খুলে যায়।
২. গরম ভাপ দেয়া
গরম ভাপ নেয়া সাধারণত প্রদাহ কমায় এবং নাকের গহ্বর খুলে বন্ধ নাক খুলতে সাহায্য করে। হালকা গরম কাপড়ের সাহায্যে নাকের বাইরে থেকে গরম চাপ বা ভাপ প্রয়োগ করা হলে এটি নাকের ছিদ্র এবং সাইনাসের প্রদাহ উপশম করে, পাশাপাশি শ্বাস নেওয়া সহজ করে।
৩. আদা
আদাতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রোপার্টি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে যা নাক বন্ধ কমাতে সাহায্য করে। এটি বন্ধ নাকের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কার্যকর। কম্প্রেসার হিসেবে আদা ব্যবহার করতে পারেন। গরম পানিতে আদা ফুটিয়ে সেটাতে কাপড় ভিজিয়ে নাকের চারপাশে গরম ভাপ দিলে আরাম পাওয়া যায়। আবার আদা চা ও বন্ধ নাক খুলতে সাহায্য করে।
৪. মধু
মধু ভিটামিন এবং খনিজের মতো শক্তিশালী পুষ্টির সমৃদ্ধ উৎস। এটিতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এটি নাক বা গলা থেকে অতিরিক্ত শ্লেষ্মা পরিষ্কার করতে পারে। গরম দুধ বা চায়ে মধু মিশিয়ে খেলে অনেক আরাম পাওয়া যায়।
৫. রসুন
রসুন হল অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের সমৃদ্ধ উৎস যা শ্বেত রক্তকণিকা বৃদ্ধির মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এটি অ্যান্টিবডি তৈরিতে সাহায্য করে যা শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমনের বিরুদ্ধে লড়াই করে। দিনে অন্তত দুবার গরম স্যুপ বা খাবারে রসুন যোগ করে খান। নাক বন্ধ সমস্যা দূর হবে।
৬. আঙ্গুরের রস
আঙ্গুর হল ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের সমৃদ্ধ উৎস যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এতে রয়েছে কিউরসেটিন নামক শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা অ্যান্টি-অ্যালার্জিক এজেন্ট হিসেবে কাজ করে।
গরম পানিতে কয়েক ফোঁটা আঙ্গুরের রস মিশিয়ে শ্বাস নিন। এই বাষ্প তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ নাক খুলতে সাহায্য করে।
৭. পেঁয়াজ
ভিটামিন এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের উপস্থিতির কারণে পেঁয়াজে এক ধরনের শক্তিশালী গন্ধ আছে যা ৫ মিনিটের মধ্যে বন্ধ নাক পরিষ্কার করতে পারে।
৮. কালো গোল মরিচ
কালো গোল মরিচ বন্ধ নাক খুলতে সাহায্য করে। এক টেবিল চামচ কালো গোল মরিচ এবং এক টেবিল চামচ মধু পানিতে মিশিয়ে মিশ্রণটি কিছুক্ষণ ফুটিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি পান করলে বন্ধ নাক খোলাসহ প্রচুর আরাম পাওয়া যায়।
৯. আপেল সিডার ভিনেগার
আপেল সিডার ভিনেগারে উপস্থিত সকল প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান নাক বন্ধ সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে প্রয়োজনীয়। এটিতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্যও রয়েছে।
২ চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার গরম পানিতে মিশিয়ে দিনে অন্তত ৩ বার খান। এই পানীয়তে এক টেবিল চামচ মধুও যোগ করতে পারেন।
১০. তরল জাতীয় খাবার খাওয়া
জুস এবং স্যুপের মতো প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার খাওয়া নাক বন্ধ প্রতিকার ও রোধে সাহায্য করে। পর্যাপ্ত তরল খাবার নাকের প্যাসেজে আটকে থাকা শ্লেষ্মা পাতলা করতে সাহায্য করে। নাক থেকে তরল বের করে দেয় এবং সাইনাসে চাপ কমায়।
সূত্র: ফার্মইজি