শিশু থেকে বৃদ্ধ অনেকেই এখন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। প্রতি বছর বর্ষার পরে এই সময়ে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। তবে এ বছরে প্রাদুর্ভাবটা বেশি। ডেঙ্গুর জন্য আসলে এমন কোনো খাবার নেই যা খেলেই রোগী সঙ্গে সঙ্গে সুস্থ হয়ে যাবে। তবে এমন কিছু বিষয় আছে যা মেনে চলতে পারলে দ্রুত এই রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার ফলাফলের ওপর নির্ভর করে কিছু খাবারের পরিবর্তন আপনাকে দ্রুত সেরে উঠতে সাহায্য করবে।
১। ডেঙ্গুতে রোগীর যাতে পানিশূন্যতা না হয় সেদিকে সবচেয়ে বেশি খেয়াল রাখতে হবে। সে ক্ষেত্রে বয়সভেদে ৩ থেকে ৪ লিটার পানি বা পানি জাতীয় খাবার যেমন- কচি ডাবের পানি, লেবুর শরবত, রসালো ফল বা ফলের রস, দুধ, লাচ্ছি, স্যুপ ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। বেশি পানিশূন্যতা হলে মুখে স্যালাইন খেতে পারবে। এই পানীয়গুলো পানিশূন্যতা রোধের পাশাপাশি দেহের সোডিয়াম পটাশিয়াম এর ভারসাম্য ঠিক রাখবে।
২। ডেঙ্গুর ফলে শরীরের যেসব টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেগুলো সারিয়ে তুলতে প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে হবে বেশি করে। এর মাঝে আছে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, বাদাম, ডাল ইত্যাদি। প্রোটিনের সঙ্গে সঙ্গে ভিটামিন সি জাতীয় খাবার, যেমন- টক জাতীয় ফল, সবুজ শাক সবজি খাবেন যা দেহে আয়রন এর শোষণ বাড়ায়। ভিটামিন ডি যা আমরা ডিমের কুসুম, সামুদ্রিক মাছ থেকে পাই তা এই সময়ে হাড়ের কার্যকারিতা রক্ষায় বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৩। ডেঙ্গুর একটি বড় সমস্যা হচ্ছে এতে রক্তের প্লাটিলেট এর সংখ্যা বেশ দ্রুত কমতে থাকে। তাই এর সংখ্যা বাড়ানোর জন্য সবুজ শাক, ডাল, বাদাম ইত্যাদি খাবার খাওয়া যেতে পারে। আমাদের দেশে একটি ধারণা আছে যে পেঁপে পাতার পানি খেলে প্লাটিলেট এর সংখ্যা বেশ দ্রুত বাড়ে। কিন্তু এখনো এর ওপরে কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা পাওয়া যায়নি। কিন্তু যেহেতু পেঁপে পাতায় আয়রন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে, তাই সারা দিনে শিশুদের ক্ষেত্রে আধা কাপ এবং বড়দের ক্ষেত্রে ১ কাপ পর্যন্ত এই পাতার রস খাওয়া যেতে পারে। কিন্তু মনে রাখতে হবে এটি বেশি পরিমাণে খেলে অ্যাসিডিটি, বদ হজম হতে পারে।
৪। ডেঙ্গুতে প্লাটিলেট এর সংখ্যা কমে যাওয়ায় রক্ত জমাট বাধার প্রক্রিয়া বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে ভিটামিন কে বেশি আছে এমন খাবার, যেমন- পালং শাক, ব্রোকলি, মাংস, কলিজা, মটরশুঁটি, পনির ইত্যাদি খেলে বেশ তাড়াতাড়ি সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
৫। ডেঙ্গু জ্বরে রোগীর মুখের রুচি বেশ কমে যায়। তাই রোগী যাতে সহজেই খাবার খেতে পারে এবং হজমের সুবিধার জন্য স্যুপ, পাতলা খিচুড়ি, নরম খাবার ইত্যাদি দিয়ে শুরু করতে পারেন। বেশি তেল, মসলাযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে যাতে পেতে গ্যাস বা বদহজম না হয়। ডায়াবেটিস, কিডনি রোগীর ক্ষেত্রে অবশ্যই বাড়তি সতর্কতা মেনে চলতে হবে। রোগ ভেদে রোগীর খাদ্যতালিকা অবশ্যই ভিন্ন ভিন্ন হবে। রোগীর প্রতিদিনের রক্ত পরীক্ষার ফল, শারীরিক অবস্থা, পছন্দ অপছন্দের ওপর নির্ভর করে খাবার তৈরি করতে হবে যাতে রোগী তার রুচি অনুযায়ী খেতে পারে ও তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।
লেখক: ফারজানা ওহাব, পুষ্টিবিদ, আলোক হাসপাতাল লিমিটেড, মিরপুর ঢাকা।