ডেঙ্গু চিকিৎসায় ডাব যেন এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গিয়েছে। আসলেই কি ডাব গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা? ডাবের দাম এতই বেড়েছে যে মনে হচ্ছে সেটি অতি দামি অ্যান্টিবায়োটিক আর সেটির ব্যবস্থা করতে হিমশিম খাচ্ছে দরিদ্র জনগোষ্ঠী থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত পরিবার পর্যন্ত।
আসুন, জেনে নিই কিছু ডেঙ্গুতে ডাবতত্ত্ব—
ডেঙ্গুতে সাধারণত আমরা ইলেকট্রোলাইট টেস্ট করি না। তবে ডেঙ্গু রোগীর যদি অন্য কোনো রোগ যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ক্যানসার কিংবা অন্য কোনো দীর্ঘস্থায়ী রোগ থাকে কিংবা ইতিপূর্বে ডেঙ্গু জ্বর হয়ে পুনরায় আবার ডেঙ্গু হয়েছে এবং ডেঙ্গু হেমোরেজিক কিংবা ডেঙ্গু শক সিনড্রোম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে ইলেট্রোলাইট টেস্ট করিয়ে থাকি।
আবার প্লাটিলেটের অভাব জনিত কারণে যদি প্লাটিলেট ব্যবহার না করে রক্তের সকল উপাদান ব্যবহার করা হয় সে ক্ষেত্রে ক্যালসিয়াম পরীক্ষা করা হয় যদিও ডেঙ্গুতে রক্তের সকল উপাদান ব্যবহার করার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ অভিমত প্রয়োজন। তা ছাড়া এবার ডেঙ্গু রোগীদের মাঝে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি জনিত উপসর্গ দেখা যাচ্ছে।
ডেঙ্গু সাধারণত অতিরিক্ত পানি পানের কারণে স্ফিতি জনিত সোডিয়ামের স্বল্পতা দেখা যায় আমরা এটি প্রতিরোধে বলে থাকি শুধু পানি পান না করে স্যুপ,ফলের জুস ও খেতে বলি। জটিলতা পূর্ণ ডেঙ্গু জ্বরে সোডিয়ামের কমার প্রবণতা বেশি দেখা যায়।
ক্ল্যাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরে কিংবা প্রথমবার ডেঙ্গু আক্রান্তদের মাঝে পটাশিয়ামের তারতম্য খুব একটা দেখা যায় না। তবে জটিলতা পূর্ণ ডেঙ্গু হেমোরেজিক বা ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে পটাশিয়াম বেড়ে যায়। ডেঙ্গুতে কিডনি ফাংশন বিঘ্ন ঘটলেও পটাশিয়াম বাড়ে। পটাশিয়াম বাড়া কিংবা কমা দুটোই অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং এটিকে যথাযথ ভাবে চিকিৎসা করাতে হয়। ডেঙ্গুর জ্বরে পটাশিয়াম গড়ে ৪.১-৪.২ মিলি মোল/লিটার থাকা ভালো (নরমাল মাত্রা- ৩.৫-৫ মিলি মোল /লিটার)
ডেঙ্গুতে ডাবের ভূমিকা আসলে কী?
১ কাপ ডাবের পানিতে ৬০০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম থাকে যেখানে মাঝারি সাইজের কলাতে থাকে ৪২০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম। ১ জন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের প্রতিদিন ৩৪০০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম আর একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারীর প্রতিদিন ২৬০০ মিলিগ্রাম পটাশিয়ামের প্রয়োজন।
প্রথম ডেঙ্গুজ্বর বা ক্ল্যাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে সাধারণত পটাশিয়ামের তারতম্য ঘটে না কিংবা হালকা কমতে পারে সে ক্ষেত্রে ডাবের পানি অল্প মাত্রায় খাওয়া যেতে পারে তবে শুধু ডাবের পানি না খেয়ে ডাবের পানির সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের স্যুপ ও শরবত খাওয়া যেতে পারে। তবে সেটি যেন অপ্রয়োজনীয় ভাবে অধিক মাত্রায় না খাওয়া হয়।
কিন্তু জটিলতা পূর্ণ ডেঙ্গু হেমোরেজিক কিংবা ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পটাশিয়াম বাড়ে সে ক্ষেত্রে ডাবের পানি খেলে পটাশিয়ামের মাত্রা বেড়ে মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ে। সে ক্ষেত্রে ডাবের পানি খাওয়া সম্পূর্ণ নিষেধ।
আমরা সাধারণত বলে থাকি ৮৫ % ক্ষেত্রে ২য় বার ডেঙ্গু আক্রান্তরাই ডেঙ্গু হেমোরেজিক কিংবা ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে ভোগেন তবে ১৫ % ক্ষেত্রে প্রথমবার ডেঙ্গু আক্রান্তরা ডেঙ্গু শক বা ডেঙ্গু হেমোরেজিক নামক জটিলতায় ভোগেন এবং তাদের পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তাই অপ্রয়োজনে অধিক পরিমাণে ডাবের পানি না খেয়ে বিএমডিসি রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী ওষুধ কিংবা খাবার খাওয়া উচিত।
লেখক: ডা. শেখ মইনুল খোকন, চিকিৎসক ও গবেষক