ডেঙ্গু চিকিৎসা: বেসরকারি হাসপাতাল যেন ডাকাতের ভূমিকায়

0
182

বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু চিকিৎসা করাতে গিয়ে নাজেহাল রোগী ও স্বজনরা
ডেঙ্গুর চিকিৎসার ব্যয়ে নাজেহাল অবস্থায় রোগী ও স্বজনরা। বাড়তি রোগীর চাপে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে না পেরে অনেকেই বাধ্য হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন বেসরকারি হাসপাতালে। তবে সরকার সেসব হাসপাতালে ক্যাটাগরিভিত্তিক খরচের তালিকা বেঁধে দিতে না পারায়, ইচ্ছেমতো টাকা আদায়ের অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। এ অবস্থায় বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের বিবেকবান হওয়ার পরামর্শ স্বাস্থ্য অধিদফতরের।

রাজধানীর বেসরকারি হাসপাতাল লং লাইফে ডেঙ্গু আক্রান্ত পাঁচ বছর বয়সি এক ছেলের চিকিৎসায় এরইমধ্যে গুনতে হয়েছে প্রায় ১ লাখ টাকা। আক্রান্তের পর পাঁচদিন চিকিৎসা চলে ওয়ার্ডে। পরিস্থিতির অবনতি হলে ভর্তি করা হয় এনআইসিইউতে। সেখানে প্রতিদিন বেড ভাড়া ৬ হাজার টাকা ছাড়াও ওষুধসহ আছে আরও অনেক খরচ। সব মিলিয়ে একপ্রকার হিমশিম অবস্থায় অসহায় ওই শিশুটির বাবা।

তিনি বলেন, প্রথম দিন আসার পরই ১০ হাজার টাকার পরীক্ষা দিয়েছে। এরপর তো প্রতিদিন পরীক্ষা আছেই। সেই সঙ্গে ওষুধ খরচ।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল না হয়ে বেসরকারি কোনো হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিক হলে চিকিৎসা করানোরই সামর্থ্য ছিল না করোনা সংকটে চাকরি হারিয়ে দেশে ফেরা এই প্রবাসীর।

এ তো গেল সংকটাপন্ন রোগীর আইসিইউর চিকিৎসা ব্যয়। তবে এ মুহূর্তে যারা সাধারণ শয্যায় ভর্তি আছেন তাদের চিকিৎসা খরচ সামলাতেও একপ্রকার হিমশিম অবস্থা। এই যেমন রিপন হোসেন। পেশায় কাঠমিস্ত্রি ওই বাবা সন্তানের চিকিৎসার জন্য পাঁচদিন ধরে কর্মহীন। একদিকে কাজ নেই তার ওপরে চিকিৎসার খরচ। সব মিলিয়ে অবস্থা দেয়ালে পিঠ ঠেকার মতো।

রিপন হোসেন বলেন, ‘গতকাল এক দিনেই আমার পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আজ তিন হাজার টাকার ওপর খরচ হয়ে গেছে।’

ডেঙ্গুর এই মহাসংকটে চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে হিমশিম অবস্থায় অনেকেই। তার ওপর বেসরকারি হাসপাতালের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় পরিস্থিতি রূপ নিয়েছে ভয়াবহ।

এক রোগীর স্বজন বলেন, প্রতিদিন অনেক খরচ হয়ে যাচ্ছে। টাকার সমস্যার কারণে হাসপাতালের বিল দিতে পারছি না।

সরকারি কিংবা সরকারি সুবিধাপুষ্ট হাসপাতালে মানবিকতার কিছু নিদর্শন মিললেও এখনও নিয়ন্ত্রণের বাইরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। তবে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে আইনের চেয়ে মানবিকতার ওপরই বেশি জোর দিচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিশেষ করে করপোরেট হাসপাতালগুলোতে অনেক খরচ। আর ব্যয়টা কিন্তু লিমিটছাড়া।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম বলেন, ‘আমরা বলব যে বিবেকবান হোন। কারণ, শুধু আইন ও নিয়ম দিয়ে বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। মানুষের এই বিপদের দিনে তাদের বিবেকবান হওয়া উচিত। যতটুকু লাভ না হলেই নয়, শুধু ততটুকু রেখেই বাকিটা মানুষের জন্য ব্যয় করা উচিত।’

চলতি মৌসুমে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৮০ হাজার।