ব্যাক পেইন বা পিঠে ব্যথা এখন খুব বেশি পরিচিত একটি সমস্যা। যেকোনো বয়সের মানুষেরই এই ধরনের ব্যথা হতে পারে। বিশেষ করে পুরুষের তুলনায় নারীদের এই সমস্যায় বেশি ভুগতে দেখা যায়।
ব্যাক পেইন বা পিঠ ব্যথা সাধারণত নিচের পিঠের পেশি, লিগামেন্ট, মেরুদণ্ড, কশেরুকার সমস্যা থেকে তৈরি হয়। এই ব্যথার কারণগুলোর ভেতর সবচেয়ে বেশি থাকে পিঠের পেশিতে চাপ পড়া এবং পিঠের কাঠামোগত সমস্যা। চলুন জেনে নেই কি কি কারণে ব্যাক পেইন বা পিঠ ব্যথা হতে পারে।
পিঠ ব্যথার কারণ
১. বাত বা আর্থ্রাইটিস
স্পাইনাল অস্টিওআর্থারাইটিস, এই রোগের জন্য পিঠে ব্যথা হয়ে থাকতে পারে। এই রোগে মানুষের পিঠের নিচের জয়েন্টগুলোর কারটিলেজের অবনতি ঘটে যার কারণে মেরুদণ্ড চেপে আসতে পারে বা সংকীর্ণ হতে পারে, এটাই মূলত ব্যথার কারণ।
২. পিঠের পেশিতে চাপ
পিঠের পেশিতে অতিরিক্ত চাপ, ভারী বস্তু ভুলভাবে উত্তোলন এবং ভুল ভঙ্গিতে শরীরের আকস্মিক নড়াচড়াতে প্রায়ই পিঠে ব্যথা করে। অতিরিক্ত কাজ করার ফলেও পেশিতে চাপ পড়তে পারে।
৩. দীর্ঘসময় বসে থাকা
দীর্ঘক্ষণ চেয়ারে বসে একটানা কাজ করার ফলে পিঠ ও কোমরে ব্যথা হতে পারে। এছাড়া দীর্ঘ সময় একভাবে দাঁড়িয়ে থাকলেও অনেক সময় পিঠে ব্যথা হতে পারে। তাই একটানা বসে না থেকে মাঝে মাঝে হাঁটুন আবার বসুন।
৪. অতিরিক্ত ওজন
অতিরিক্ত ওজনের ফলেও পিঠ ব্যথা হতে পারে। অতিরিক্ত ওজন পেছনের পেশীগুলিকে চাপ দিতে পারে। এর ফলে ব্যথার উদ্রেক হয়।
৫. কাঠামোগত সমস্যা
কশেরুকা হলো মেরুদণ্ডকে ঘিরে থাকা চাকতি আকারের হাড়। এই হাড়গুলো একে অপরের সাথে সংযুক্ত। প্রতিটি কশেরুকার মধ্যবর্তী স্থানগুলোতে ডিস্ক নামক টিস্যু থাকে এবং কশেরুকাগুলোকে চারপাশ থেকে ঘিরে রাখে। এই ডিস্কে আঘাত পেলে পিঠে ব্যথা হয়ে থাকে।
৬. অস্টিওপোরোসিস
হাড়ের ঘনত্ব হ্রাস এবং হাড় পাতলা হয়ে যাওয়াকে অস্টিওপোরোসিস বলা হয়। এতে আপনার কশেরুকার ছোট ছোট ফাটল হতে পারে যেগুলো গুরুতর ব্যথার কারণ।
৭. কিডনির সমস্যা
কিডনিতে সংক্রমণ, হেমোডায়ালাইসিস বা কিডনিতে পাথর হলে পিঠে ব্যথা হতে পারে।
ব্যাক পেইন বা পিঠে ব্যথার প্রতিকার
পিঠে ব্যথা সাধারণত কোন রোগ নয়, বিভিন্ন রোগের উপসর্গ। তাই কোনো ব্যথাকেই অবহেলা না করে এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় বের করা উচিত। আর ব্যথা অতিরিক্ত হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
১. পিঠে ব্যথা এড়াতে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা বা বসে থাকা যাবে না। দীর্ঘ সময় দাঁড়ানোর প্রয়োজন হলে একটি পা প্ল্যাটফর্মের ওপরে কিংবা টুলের ওপরে রেখে দাঁড়াতে হবে। আর দীর্ঘ সময় বসে থাকলেও মাঝে মাঝে উঠে দাঁড়িয়ে হেঁটে আসতে হবে।
২. পিঠে ব্যথা এড়াতে বা কমাতে ব্যায়াম করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে হালকা এবং সাধারণ অ্যারোবিক্স দিয়ে শুরু করুন এবং চালিয়ে যান। এটি আপনার পেশীগুলিকে আরও ভাল কার্য সম্পাদন করার অনুমতি দিয়ে আপনার পিঠের সহনশীলতা এবং শক্তি বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। এ ছাড়া সাঁতার বা হাঁটা ভালো বিকল্প।
৩. ঘুমানোর সময় ও কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যেমন- শক্ত তোশক বা জাজিমের ওপর ঘুমানো। মুখ নিচের দিকে রেখে ঘুমাবেন না। চিৎ হয়ে ঘুমানো উচিত। যদি পাশ ফিরে ঘুমাতে চান, তাহলে সেই পাশে হাঁটু সামান্য বাঁকা করে ঘুমাবেন। এ ছাড়া হাঁটুর নিচে বালিশ দিয়ে আপনি আপনার পিঠের উপর চাপ অর্ধেক কমে ফেলতে পারেন।
৪. ব্যথার স্থানে হালকা ম্যাসাজ, অর্থাৎ আলতোভাবে মালিশ করলে আরাম লাগতে পারে। তবে জোরে জোরে মালিশ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৫. সাময়িকভাবে ব্যথা কমাতে ব্যথানাশক জেল ও ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে প্যাকেটের ভেতরে থাকা নির্দেশিকা ভালোমতো পড়ে নিতে হবে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া উচিত নয়।
৬. মেরুদন্ডের হাড় মজবুত রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি গ্রহণ করা উচিত। ক্যালসিয়াম অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে। দুধ, দই, শাকে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় এবং ভিটামিন ডি রয়েছে চর্বিযুক্ত মাছ, ডিমের কুসুম, গরুর যকৃত বা কলিজা কিংবা পনিরে।
৭. অফিসের চেয়ারে বসার সময় কিংবা দাঁড়ানোর সময় ঝুঁকে যাবেন না। বিশেষ করে যদি আপনি প্রতিদিন কয়েক ঘন্টার বেশি বসে থাকেন বা ‘ডেস্ক জব’ করেন তাহলে ঠিকভাবে বসা এবং আপনার পিঠকে পেছন থেকে সঠিকভাবে চাপ দিয়ে রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ।