রক্তশূন্যতায় ভুগছেন কিনা বুঝবেন কীভাবে?

0
188

বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন সময় মানুষের শরীরে রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে। শরীরে রক্তশূন্যতা হওয়া খুবই সাধারণ ব্যাপার। পুরুষের তুলনায় নারীদের মধ্যে রক্তশূন্যতা বেশি দেখা যায়।

রক্তশূন্যতা কোন অসুখ না হলেও অনেক সময় কোন বড় অসুখের লক্ষণ হয়ে দাঁড়ায় এই রক্তশূন্যতা। এ ছাড়া শরীরে রক্তের অভাব সময়মতো দূর করা না গেলে শারীরিক স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। তাই সব সময় রক্তশূন্যতা আছে কিনা সতর্ক থাকা প্রয়োজন।

রক্তশূন্যতা কী?
সাধারণত মেডিকেল টার্মে রক্তশূন্যতাকে অ্যানিমিয়া বলা হয়। রক্তে লোহিত রক্ত কণিকা (RBC) বা হিমোগ্লোবিন স্বাভাবিক সংখ্যার চেয়ে কমে গেলেই অ্যানিমিয়া দেখা দেয়। মানুষের রক্তে হিমোগ্লোবিন বারোর নিচে নেমে গেলে তাকে রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া বলা হয়।

যদিও শিশুদের বেলায় রক্তশূন্যতা আছে কিনা তা বিভিন্ন বয়সে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণের উপর নির্ভর করে নির্ণয় করা হয়। যেমন নবজাতকের বেলায় যদি হিমোগ্লোবিন দশের কম হয় বা বারো হয়, তাহলে এটা রক্তশূন্যতা। কারণ, নবজাতকের রক্তের হিমোগ্লোবিন থাকতে হবে সতেরো বা আঠারো।

রক্তশূন্যতা কেন হয়?
অপুষ্টিজনিত কারণ, আয়রন, ফলিক এসিডের অভাবে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়।

থ্যালাসেমিয়ার মতো কিছু জন্মগত রোগের কারণেও রক্তশূন্যতা দেখা দেয়।

এ ছাড়াও শরীরের অভ্যন্তরীণ ক্ষতের কারণে রক্তক্ষরণের ফলেও শরীরে রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে।

এ ছাড়া অনেক সময় বংশানুক্রমে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়, অর্থাৎ পরিবারের কারও এই সমস্যা থাকলে পরবর্তী প্রজন্মেও রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে।

দীর্ঘদিন ধরে ব্যথার ওষুধ সেবন করলেও রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়।

রক্তশূন্যতার লক্ষণ
১. রক্তের লোহিত রক্ত কণিকা বা হিমোগ্লোবিন অক্সিজেন পরিবহণ করে। তাই হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে রোগী সব কাজে হাঁপিয়ে বা ক্লান্ত হয়ে পড়েন। অনেক সময় শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।

২. রক্তস্বল্পতার কারণে ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যেতে শুরু করে। এ ছাড়াও রক্তশূন্যতার কারণে চোখের ভেতরের মাংস পেশিগুলোও লাল রং হারিয়ে ফেলে।

৩. রক্তাল্পতায় আক্রান্তকে বিষণ্ণতায় ভুগতে দেখা যায়। সর্বক্ষণ দুর্বলতা আর মাথাব্যথা হওয়ার কারণে রোগীকে ক্রমশ বিষণ্ণতা গ্রাস করে। ক্ষুধামন্দাও দেখা দেয়।

৪. রক্তাল্পতার আর একটি উল্লেখযোগ্য লক্ষণ হল, হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়া। রক্তশূন্যতার কারণে হৃৎপিণ্ড পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত শরীরে সঞ্চালনের জন্য পাম্প করতে পারে না। ফলে হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটাই বেড়ে যায়।

৫. শরীরের আয়রন কমে গেলেই দেখা দেয় রক্তশূন্যতা। আর আয়রন কমে গেলে চুলও পড়া বেড়ে যায়। তাই অতিরিক্ত চুল পড়ার সমস্যাও রক্তস্বল্পতার লক্ষণ হতে পারে।

৬. অনেক সময় হাত-পা ঠান্ডা হয়ে থাকাও কিন্তু রক্তশূন্যতার ইঙ্গিত দেয়। তাই এসব লক্ষণ দেখলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

৭. রক্ত স্বল্পতা বেশি হলে অনেক সময় ঠোঁটের কোণে ক্ষত হয়, জিহ্বায় ঘা হয়, চুলের ঝলমলে উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যায়, চুল ও নখ ফেটে যায়।

৮. রক্তস্বল্পতায় ভোগা নারীদের মাসিক অনিয়মিত হয়ে পরে।

রক্তশূন্যতার নিরাময়
১. রক্তশূন্যতা হলে প্রথমেই এর তীব্রতা আর নেপথ্যের কারণ শনাক্ত করতে হবে। আর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।

২. আয়রন ডেফিসিয়েন্সি অ্যানিমিয়া ও ভিটামিন ডেফিসিয়েন্সি অ্যানিমিয়ায় হলে আয়রন, ফোলেট, ভিটামিন বি ১২ ও ভিটামিন সি জাতীয় খাবার বেশি করে খেয়ে রক্তশূন্যতা কমানো যায়। অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে আয়রন ট্যাবলেট খাওয়া যেতে পারে।

৩. পুষ্টিকর খাবার বেশি বেশি করে খেলে কোনও ওষুধ ছাড়াই রক্তশূন্যতা দূর করা সম্ভব। যেমন- লাল মাংস, গিলা-কলিজা, ছোট মাছ, লালশাক, কচুশাকসহ দুধ, ডিম বিভিন্ন ফল ইত্যাদি বেশি করে খেতে হবে।

৪. নারীদের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় এবং শিশুকে স্তন্যপান করানোর সময় শরীরে আয়রনের ঘাটতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই এ সময় আয়রন সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খাওয়া দরকার।

৫. রক্তশূন্যতা তীব্র পরিমাণে হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে।