একেবারে ছোট বয়স থেকে বয়ঃসন্ধি পর্যন্ত যে কোনও সময়ে অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে শিশুদের। তবে বর্তমানে শিশুকে রোগমুক্ত রাখতে মা-বাবারা অনেক সময় বেশি সতর্কতা অবলম্বন করেন। যার ফলে, শিশুদের শরীরে ‘ইমিউনিটি সিস্টেম’ ঠিক মতো কাজই করে না। খুব সহজেই শিশুরা নানা ধরনের ‘অ্যালার্জি অ্যাটাক’-এর শিকার হয়। রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা তাদের শরীরে তৈরিই হয় না।
অ্যালার্জি কী?
মানুষের শরীরের একটি বৈশিষ্ট্য হলো যে উপাদান শরীরের জন্য উপকারী নয় কিন্তু বার বার শরীরের সামনে আসে, তখন শরীর এর প্রতি একটি প্রতিরোধ গড়ে তোলে। একে বলা হয় ইমিউনিটি। তবে যখন শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয় এমন স্বাভাবিক উপাদান সামনে আসে, তবুও এর বিরুদ্ধে যখন শরীর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে, তখন একে বলে অ্যালার্জি। যেমন ধরেন অনেকে ডিম, মাছ, মাংস, সবজি খেলেও সমস্যা হয় না কিন্তু কিছু মানুষ আছে, যারা এগুলো খেলে শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়। একে বলে অ্যালার্জি।
অ্যালার্জি কীভাবে হয়?
ঘরে জমা ধুলা, কোনও বিশেষ খাবার, বিভিন্ন পোকামাকড়ের সংস্পর্শে অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হতে পারে শিশু। পোষা প্রাণী থেকেও ছড়াতে পারে অ্যালার্জি। এ ছাড়া বাতাসে ভাসমান ফুলের রেণু, ধূলিকণা থেকে অ্যালার্জিতে পড়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
অ্যালার্জির লক্ষণ
অনেকের ধারণা, অ্যালার্জি হলে শুধু ত্বকে র্যাশ বের হয়। কিন্তু চিকিৎসকদের মতে, অ্যালার্জির নানা উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যেমন সর্দিজ্বর আসতে পারে আপনার শিশুর। ডাক্তারি পরিভাষায় একে বলে ‘হে ফিভার’। হতে পারে শ্বাসকষ্টের সমস্যাও। অনেকের সমস্যা দেখা দেয় শুধু চোখে।
অনেক ক্ষেত্রে ফুসকুড়ি, চুলকানির সমস্যা দেখা দেয়। তবে এ ধরনের উপসর্গ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশুকে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত।
অ্যালার্জির প্রতিরোধ কীভাবে?
সামান্য সতর্ক থাকলে আপনার শিশুকে অ্যালার্জি থেকে বাঁচাতে পারেন আপনিই। জানুন কয়েকটি পদ্ধতি—
১. বাড়িতে কোনও পোষ্য থাকলে, শুরু থেকে অবশ্যই তার সঙ্গে খেলতে দিন শিশুদের। এর ফলে শিশুর শরীরে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডি তৈরি হবে।
২. শিশু যেন বিকেলে খোলা মাঠে বেড়ানোর বা দৌড়ঝাঁপ করে খেলার সুযোগ পায়। অযথা তাকে বাড়িতে বসিয়ে রাখবেন না।
৩. ছোট থেকেই সব ধরনের খাবার, ফল ও সবজি খাওয়ানো অভ্যাস করান শিশুকে। বয়স বাড়লে ফর্মুলা দুধের বদলে গরুর দুধ খাওয়ান খুদেকে। এর ফলে, খাদ্যজাত অ্যালার্জির হাত থেকে অনেকটাই মুক্ত থাকবে সে।
৪. অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মা ভিটামিন ডি সেবন করলে শিশুদের মধ্যে অ্যালার্জির প্রবণতা কম হয়। শিশুদের জন্মের পর থেকেই মায়ের বুকের দুধ অত্যন্ত জরুরি। এর ফলে অনেক ধরনের অ্যালার্জির হারই কমে যায় শিশুদেহে।
৫. শিশুদের কাছাকাছি কোনও ভাবেই ধূমপান উচিত নয়। এমনকি, অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মা-কেও ধূমপান না করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। বেশি মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খেলেও অ্যালার্জির সমস্যা হয়।
৬. ছোট থেকেই শিশুকে বেশি করে পানি খাওয়ার অভ্যাস করান। খাবারে আদা, গোলমরিচ, হলুদের মতো মশলার ব্যবহার বেশি করে করুন।