বর্ষার শুরুতেই আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। চলমান ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন কীটতত্ত্ববিদসহ সংশ্লিষ্ট সবাই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ডেঙ্গুর মৌসুম অক্টোবর-নভেম্বর হলেও এবার তা বছরের শুরুতেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আক্রান্তের পাশাপাশি প্রাণহানিও ঘটছে উল্লেখযোগ্য হারে। গত বছরের এ সময়ে যত রোগী শনাক্ত হয়েছিল, চলতি বছর শনাক্ত হয়েছে তার প্রায় ছয়গুণ। ২০২২ সালে দেশের ইতিহাসে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ মৃত্যু হলেও প্রথম ছয় মাসে মারা যায় মাত্র একজন। আর চলতি বছর প্রকোপ দেখা দেওয়ার ছয় মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই মৃত্যু হয়েছে ২৯ জনের। ফলে এ বছর আক্রান্তে ও মৃত্যুতে নতুন রেকর্ড হতে পারে বলে শঙ্কিত সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান।
সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, শয্যা সংকটে ডেঙ্গু আক্রান্ত অনেক রোগী মেঝেতে শুয়ে আছেন। রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। এখানে বর্তমানে ২৭০ জনেরও বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। যাদের বেশির ভাগের বাড়ি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায়।
হাসপাতালের ১০ তলায় মেডিসিন বিভাগের পুরো জায়গা জুড়ে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। নির্ধারিত বেডের চেয়েও দ্বিগুণ রোগী ভর্তি হওয়ায় সেখানে মেঝেতেও শয্যার ব্যবস্থা করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সিঁড়ির-লিফটের কিনারাও ফাঁকা নেই। সেখানেও রয়েছে রোগী।সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করছেন ডাক্তার-নার্সরা। রোগী ও স্বজনদের উপচে ভিড় ওয়ার্ড জুড়ে। হাসপাতালটির ৮ তলায় শিশুদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। ডেঙ্গু রোগীর চাপ বাড়ায় সেখানেও ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া তিন তলায়ও ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান বলেন, প্রতিনিয়তই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। এর লাগাম টানা জরুরি, আশঙ্কাজনক হারে ছড়িয়ে পড়ার আগে পরিকল্পিতভাবে এর প্রতিরোধ করা প্রয়োজন।
চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪ হাজারের বেশি রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মারা গেছেন ২৯ জন। যার মধ্যে চলতি মাসের গত ১৫ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা গত ৫ মাসের চেয়ে বেশি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় রোগী বেশি আসছে হাসপাতালগুলোতে। শুক্রবারও ৩৯ রোগীর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ২৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ১৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। তবে ঢাকার বাইরে চট্রগ্রামেও এ বছর ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বেড়েছে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৯৬২ ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। এদের মধ্যে ঢাকার ৫৩টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ৭৭৯ জন এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ১৮৩ জন ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছর এ পর্যন্ত সারাদেশে ৪ হাজার ১২৬ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা জানান, ডেঙ্গু জ্বরের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। এই জ্বর সাধারণত নিজে নিজেই ভালো হয়ে যায়। তাই উপসর্গ অনুযায়ী সাধারণ চিকিৎসা যথেষ্ট। কিছু কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
>> শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে রক্তপাত হলে।
>> প্লাটিলেটের মাত্রা কমে গেলে।
>> শ্বাসকষ্ট হলে বা পেট ফুলে পানি এলে।
>> প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে।
>> জন্ডিস দেখা দিলে।
>> অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বলতা দেখা দিলে।
>> পেটে ব্যথা বা বমি হলে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ডা. শারফুদ্দিন অহমেদ বলেছেন, জ্বর হলেই রক্ত পরীক্ষা করাতে। একই সঙ্গে গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।