কখনো কখনো মানুষ চারপাশের সবকিছু থেকে নিজেকে একা করে রাখে। কিন্তু জাপানে কর্মজীবী মানুষের প্রায় ১.৫ মিলিয়ন নিজেকে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর সমাজ থেকে দূরে রাখেন, একাকী বাস করেন বলে একটি সরকারি সমীক্ষা জানিয়েছে। জরিপ অনুসারে, এর এক-পঞ্চমাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে করোনা মহামারির সময়ে। তবে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি। খবর এএফপির।
এ ধরনের মানুষ সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগ থেকে দূরে থাকেন এবং অনেক ক্ষেত্রে টানা কয়েক বছর ধরে বাড়ির বাইরে পর্যন্ত বের হন না। এ ধরনের মানুষকে ‘হিকিকোমোরি’ বলা হয়।
হিকিকোমোরি শব্দটি, ‘হিকি’ অর্থাৎ ‘প্রত্যাহার করা’ এবং ‘কোমোরি’ অর্থাৎ ‘ভেতরে থাকা’ থেকে এসেছে।
জাপানি মনোবিজ্ঞানী তামাকি সাইতো তার ১৯৯৮ সালে ‘সোশ্যাল উইথড্রোয়াল-অ্যাডোলেসেন্স উইদাউট অ্যান্ড’ নামের বইয়ে এই শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন।
হিকিকোমোরিদের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। এ সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা নিজেদের কমপক্ষে ছয় মাস বাড়িতে বিচ্ছিন্ন রাখেন, যেকোনো সামাজিক সম্পর্ক থেকে বিচ্ছিন্ন থাকেন এবং এমন কাজ এড়িয়ে যান যে কাজে তাদের কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে হতে পারে। তারা নিজেকে সমাজ থেকে বিচ্যুত রেখে আধুনিক যুগের সন্ন্যাসীদের মতো জীবনযাপন করে।
জাপানে এটি একটি গুরুতর সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। সেখানে এই সামাজিক প্রত্যাহারের ঘটনা কিশোর, তরুণ ও প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ব্যাপক হারে দেখা যাচ্ছে। তারা তাদের বাড়িতে নির্জনতায় পড়ে থাকেন, এমনকি কয়েক মাস বা বছর ধরে বাইরের কোনো কাজে যান না। এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পর্যন্ত যান না।
তারা সাধারণত নিজেদের বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকেন। ফলে খাবার বা আশ্রয় নিয়ে তাদের চিন্তা করতে হয় না। তাদের এই চরম সমাজবিমুখতা যা কয়েক বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। সেটি তাদের নিজেদের জন্য এবং যারা তাদের যত্ন নেন অর্থাৎ তাদের পরিবারের জন্য কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সরকারি গবেষণায় দেখা গেছে, চাকরিজীবীদের বেশির ভাগই করোনার সময় চাকরি হারিয়েছেন বা চাকরি বাদ দিয়েছেন।