নারীরা পুরুষের পাশাপাশি কাজ করে যাচ্ছে সব ক্ষেত্রেই। আমরা প্রমাণ করেছি যে শুধু স্বাস্থ্যসেবা খাতে নয়, সব ক্ষেত্রেই আমরা আরও বেশি অবদান রাখতে পেরেছি। এটি নারীদের অবদান উদযাপন করার জন্য একটি সুন্দর সুযোগ।
মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) রাজধানীর আমারি হোটেলের বল রুমে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন সূর্যের হাসি নেটওয়ার্কের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারপারসন অধ্যাপক রুবিনা হামিদ। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে নারী নেতৃবৃন্দের বিস্ময়কর অবদান ও অর্জন উদযাপন উপলক্ষে এ প্যানেল আলোচনার আয়োজন করা হয়।
যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে- আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির এইউএইচসি অ্যাকটিভিটি এবং সূর্যের হাসি নেটওয়ার্ক।
প্যানেল আলোচনায় আরও উপস্থিত ছিলেন- সূর্যের হাসি নেটওয়ার্কের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শায়লা পারভীন, ইউএসএআইডির এইউএইচসি প্রজেক্ট ও প্যানেল মডারেটর চিফ অব পার্টি পারভেজ মোহাম্মদ আশেক, ইউএসএআইডি/ জনসংখ্যা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি অফিস প্রকল্প ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ (মাতৃ ও নবজাতক স্বাস্থ্য) ডা. ফারহানা আখতার, সাজিদা ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জাহিদা ফিজ্জা কবির, পালস ডিজিটাল হেলথ কেয়ারেরসিইও এবং এমডি ও সিইও -ওরাকল বাংলাদেশ রুবাবা দৌলা। এছাড়াও ইউএসএআইডি প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন ডেভেলপমেন্ট, হিউম্যানিট্যারিয়ান এবং দাতা সংস্থা, প্রাইভেট ফাউন্ডেশন, স্টার্ট আপ এবং সূর্যের হাসি নেটয়ার্ক কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে সূর্যের হাসি ক্লিনিকের পাঁচ ক্লিনিক ম্যানেজারকে স্বাস্থ্যসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য সম্মাননা হিসেবে ক্রেস্ট দেওয়া হয়। পুরস্কার প্রাপ্ত ক্লিনিক ম্যানেজাররা হলেন- রিক্তা রায়, রওশন আরা খানম, রেবেকা সুলতানা, আফসানা খাতুন ও সুলতানা বেগম।
অনুষ্ঠানে রুবিনা হামিদ বলেন, এমন একটি দিন আসবে যখন আমরা পুরুষ দিবসও উদযাপন করবো। সূর্যের হাসি নেটওয়ার্কের সব ক্লিনিক ম্যানেজাররাই প্রকৃত চ্যাম্পিয়ন, তাদের অবদান, কার্যক্রম ও তাদের কৃতিত্বই এর উদাহরণ। বাংলাদেশের সমাজের বিভিন্ন স্তরে নারীদের ক্ষমতায়নে তাদের সেবা ও অবদানের জন্য তাদের শুভেচ্ছা জানাই।
সূর্যের হাসি ক্লিনিক ম্যানেজারদের ক্রেস্ট বিতরণের পর পারভেজ মোহাম্মদ আশেক ইউএসএআইডির এইউএইচসি প্রজেক্ট ও প্যানেল মডারেটর চার নারী প্যানেলিস্টদের নিয়ে আলোচনা সভা শুরু করেন।
সূর্যের হাসি নেটওয়ার্কের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শায়লা পারভীন বলেন, নারীরা খুব শক্তিশালী। আমরা যখন সুযোগ পাই এবং কোনো দায়িত্ব নেই সেটি আমরা ভালোভাবে সম্পন্ন করার চেষ্টা করি। কাজের পাশাপাশি আমরা আমাদের সন্তানদেরও যত্ন নেই। আমরা পিছিয়ে নেই, বরং শুধুই সামনে এগিয়ে চলার প্রয়াস। স্বাস্থ্যসেবা খাতে নারীদের অবদান অপরিসীম যা শুধু সূর্যের হাসি নেটওয়ার্কে নয়, বাংলাদেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্যসেবায় লক্ষ্য করা যায়। সূর্যের হাসি ক্লিনিকের বেশিরভাগ কর্মী নারী এবং আমরা তাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছি কোনো বাধা-বিপত্তি ছাড়াই।
ডা. ফারহানা আখতার বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পর যখন নারী ও শিশুরা তাদের নিজ কমিউনিটিতে প্রথমবারের মতো স্বাস্থ্যসেবা নিচ্ছে যা সবাইকে বেশ প্রভাবিত করেছে। দেশ জুড়ে সর্বোপরি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা জোরদার ও সহজলভ্য করতে আমি কাজ করে যাচ্ছি এবং এ নিয়ে আমি বেশ গর্বিত। অবশ্যই স্বাস্থ্যসেবা খাত ও এতে নারীর অবদানের জন্য আরও অনেক কাজ করা বাকি আছে। ইউএসএআইডি, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, নানা কমিউনিটি, স্থানীয় এবং সরকারি বিভিন্ন সংস্থাগুলো স্বাস্থ্যসেবা খাতকে আরও সুনির্দিষ্টভাবে গড়ে তোলার জন্য একে অপরের সঙ্গে সহযোগিতা করতে হবে। যা একটি ফলপ্রসূ পদক্ষেপ বলে মনে করি।
সাজিদা ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জাহিদা ফিজ্জা কবির বলেন, আমি যে ঘরনার কাজের সঙ্গে জড়িত, সেখানে আমি কাজ করতে গিয়ে অনেক কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী গ্রামে ঘুরে ঘুরে এবং হাজার হাজার মানুষের জীবন প্রভাবিত করতে দেখেছি। মহিলা তত্ত্বাবধায়ক, কর্মী এবং নার্সরা বেশিরভাগই খুব নম্র এবং ন্যূনতম শিক্ষার সঙ্গে একটি ভালো ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসেন। অথচ তারা অনেক মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনেন। একই সঙ্গে তারা স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কাজ করে বেশ আত্মবিশ্বাসী। আমি জানি এ নিয়ে আরও অনেক কাজ করার সুযোগ আছে। এই নারীরাই সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তাদের এই অবদান প্রেরণা এবং উৎসাহ জোগায়।
পালস ডিজিটাল হেলথ কেয়ারের সিইও রুবাবা দৌলা বলেন, নারী নেতৃত্বের যে চ্যালেঞ্জগুলির সম্মুখীন হতে হয় সেগুলোর মধ্যে আমি প্রথমেই বলবো আমাদের অচেতন পক্ষপাতিত্বের প্রবণতা নিয়ে। আমাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা, আমাদের নিজস্ব চিন্তাধারার ভিত্তিতে আমরা কেউই বিচার বা সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। এটি আমাদের কাজের গতি ও সুযোগকে সীমাবদ্ধ করে দেয়। ত্যাগের মন মানসিকতা থাকা তাই আবশ্যক। আপনি কখনোই সবকিছু সমষ্ঠিগতভাবে পাবেন না। কাজ ও জীবনের ভারসাম্য রেখেই নারীর পথ চলতে হবে।
দ্বিতীয় পয়েন্ট হলো, সমান সুযোগ প্রদান করতে না পারার অপারগতা। চাকরির নিয়োগের ক্ষেত্রে যদি দেখি পুরুষের তুলনায় নারীর অংশগ্রহণের পরিসংখ্যান কম তখন চাওয়া সত্ত্বেও সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা করার সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। তাই মেয়েদেরকে ছোট থেকেই এই নিয়মের অধীনে থাকার শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন। তারা যেন পিছিয়ে না থাকে বরং সমানতালে সব বিষয়ে যোগদান করে সেটি সুনিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক। তৃতীয়ত, নারীদের নেটওয়ার্কিং করতে হবে। আমরা যেভাবে পুরুষদের নেটওয়ার্কিং করতে দেখি, একইভাবে নারীদেরও নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখার প্রবণতা থাকতে হবে।
আলোচনা শেষে শ্রোতাদের জন্য প্রশ্নোত্তর পর্ব উন্মুক্ত করা হয়। এছাড়াও পারভেজ মোহাম্মদ আশেক, প্যানেল মোডারেটর, প্যানেলিস্টদেরকে তাদের চিন্তাভাবনা, তাদের গল্প, তাদের অবদান এবং তাদের কৃতিত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন করেন। কীভাবে তারা ভিন্ন ভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি থেকে স্বাস্থ্যখাতে যুক্ত হলেন, কীভাবে তারা নারী হিসেবে এই খাতে অবদান রাখেন এবং বাংলাদেশের নারীর ক্ষমতায়নে যুক্ত হন- এসব বিষয়ে নিজের অভিজ্ঞতা জানান তারা।